আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে কৃষি উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম রবি গড়ে তুলেছেন নতুন জাতের আম কল্যাণভোগের বিশাল বাগান। শ্রম, মেধা আর উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বরেন্দ্রর লাল মাটিতে ১২ বিঘা জমিতে তিনি এই বাগান গড়ে তোলেন। বারোমাসি জাতের এই আম বছরে তিনবার বিক্রি করছেন রবি। আম, গাছের চারা আর ডগা বিক্রি করে এক বছরে তিনি আয় করেছেন ৩০ লাখ টাকা। ‘কল্যাণভোগ’ আমটি হিমসাগরের মতো রসালো ও সুস্বাদু।
উপহার পাওয়া মাত্র ছয়টি কল্যাণভোগ গাছের ডগা (সাইন) নিয়ে রবির পথচলা শুরু। ২০২১ সালে জমি লিজ নিয়ে বাগান তৈরি করেন। মাত্র চার বছরেই তিনি ছয় হাজার গাছের মালিক। এখন কোনো গাছে আম পাকছে, কোনোটিতে এসেছে মুকুল। মুকুল থেকে বের হচ্ছে অসংখ্য দানা দানা গুটি।
কল্যাণভোগ আমের খোসা মাঝারি মসৃণ। আঁটি পাতলা এবং আঁশ নেই। রসালো আর স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় এই আম। খেতে অনেকটা হিমসাগরের (রাজশাহী অঞ্চলে ক্ষিরসাপাত নামে পরিচিত) মতো। সব আম যখন শেষ হয়ে যায়, তখন এই আম পাকা শুরু হয়। দেরিতে পাকে তাই আমের দামও অনেক বেশি। আমটি ইতোমধ্যে এই এলাকায় ‘লেট ক্ষিরসাপাত’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। সবশেষে পাকার কারণে অসময়ে আমের চাহিদা মেটাচ্ছে রবির কল্যাণভোগ।
একটি আমের ওজন চারশ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে। ফলনও অনেক বেশি। হরেক রকম বৈশিষ্ট্য আর লাভজনক হওয়ায় কল্যাণভোগ আম ইতোমধ্যে আমচাষিদের মাঝে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এর নাম, খ্যাতি আর যশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। রবিউল ইসলাম রবি ২০০১ সালে গোমস্তাপুরের ইউসুফ আলী কলেজ থেকে বিকম পাশ করেন। এর আগেই নবম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় নার্সারিতে কারিতাস থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জাতের আম নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গড়ে তোলেন আমের চারার তিনটি নার্সারি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টি কালচারের কর্মচারী মাইনুল ইসলাম ২০১৭ সালে রবিকে ছয়টি কল্যাণভোগ আম গাছের ডগা উপহার দেন। এরপর রবি বড় জাতের একটি অন্য গাছের সঙ্গে ডগাগুলো গ্রাফটিং করে কল্যাণভোগের চারা তৈরি করেন। এরপর সেগুলো নিজের বাগানে রোপণ করেন। বছর তিনেক পর তিনি বুঝতে পারেন, এ আমটি বারোমাসি। সারা বছর ফলন পাওয়া যায়।
এরপর আম গাছগুলো বাড়তে থাকলে সেগুলোর ডগা অন্য গাছে গ্রাফটিং করে রবি আরও বেশি চারা তৈরির উদ্যোগ নেন। ২০২১ সালের শেষ দিকে তিনি গোমস্তাপুরের খয়রাবাদ এলাকায় ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে কল্যাণভোগের বাগান তৈরি করেন। ২০২৪ সাল থেকে গাছে আম ধরতে শুরু হলে আঁটি থেকেও তিনি চারা তৈরি শুরু করেন। বাগানটিতে এখন আম গাছের সংখ্যা ছয় হাজার। গোড়মতি এবং আশ্বিনা আম শেষ হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ থেকে পাকতে শুরু করে কল্যাণভোগ। অক্টোবরের শেষে বর্তমানে রবির বাগানের আম বিক্রি হচ্ছে। আরও অন্তত ১৫ দিন পাওয়া যাবে। আম বিক্রির জন্য তাকে হাট বা বাজারে যেতে হয় না। বাগান থেকেই কিনে নেন ক্রেতারা। অনলাইনেও তার আমের চাহিদা ব্যাপক। প্রতিদিন কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে সুমিষ্ট কল্যাণভোগ। প্রতিকেজি কল্যাণভোগ আম রবি এখন বিক্রি করছেন তিনশ টাকা কেজি। তবে গত বছর ছিল কেজিতে আরও একশ টাকা বেশি।
রবি আমের পাশাপাশি কল্যাণভোগের চারা এবং ডগা বিক্রি করছেন। প্রতি ডগার দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর তিনশ টাকা থেকে শুরু গাছের চারার দাম।
রবির কল্যাণভোগ গাছের চারা এখন বৃহত্তর রাজশাহীর চারটি জেলা ও উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। কল্যাণভোগ আমের সফল চাষি রবি বলেন, প্রচণ্ড পরিশ্রমের মাধ্যমে আজকের এ সফলতা। এক বছরের মধ্যেই আম ও চারা বিক্রি করে ৩০ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এটি আরও বাড়ছে। অন্য কৃষি উদ্যোক্তারাও যেন কল্যাণভোগ আমের বাগান তৈরিতে আগ্রহী হন, সেজন্য আমি তাদের সহযোগিতা করতে চাই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, কল্যাণভোগ আম চাষ লাভজনক হওয়ায় ইতোমধ্যে চাষিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কৃষি উদ্যোক্তা রবির শ্রম আর প্রচেষ্টার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। দেরিতে পাকার কারণে মানুষ বছরের বেশির ভাগ সময় আম খেতে পারবেন। আমরা যে কোনো পরামর্শ ও সহায়তার জন্য কৃষকদের সঙ্গেই রয়েছি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ লুৎফর রহমান হীরা
হেড অফিসঃ ১/ জি,আদর্শ ছায়ানীড়, রিংরোড, শ্যামলী, আদাবর ঢাকা - ১২০৭।
স্বত্ব © ২০২৫ চলনবিলের সময়