এল ক্লাসিকোয় আগুন জ্বেলে এখন সমালোচনার মুখে ইয়ামাল

: স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ৫ ঘন্টা আগে
লামিন ইয়ামাল। ছবি : সংগৃহীত

3

রোববার রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ বাঁশি বাজতেই মাঠের বাতাসে যেন বারুদ ছড়িয়ে পড়ে। রিয়াল মাদ্রিদের ২–১ গোলে জয়ের পর বার্সেলোনার তরুণ তারকা লামিন ইয়ামাল এগিয়ে যান তার স্পেন সতীর্থ দানি কারভাহালের সঙ্গে হাত মেলাতে। কিন্তু করমর্দনের বদলে এল চড়াই উক্তি।

‘তুমি অনেক বেশি কথা বলো,’ ৩৩ বছর বয়সী কারভাহাল ইয়ামালের সাথে কটাক্ষভরে হাত নেড়ে বলেন । সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মাঠে। রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া ছুটে আসেন, ইয়ামালকে ভর্ৎসনা করেন। এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা চেষ্টা করেন শান্ত করতে, কিন্তু তখনই মাঠে জটলা তৈরি হয়। অবশেষে মার্ক কাসাদো এসে ইয়ামালকে নিয়ে যান টানেলের দিকে।

কিন্তু ঘটনাটা সেখানেই শেষ হয়নি। টানেলের মুখে হাজির হন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র—তিনিও যেন হিসাব চুকিয়ে নিতে চান। রাফিনিয়া এসে শেষমেশ দুই পক্ষকে শান্ত করেন। ততক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গেছে, ম্যাচের আগে ইয়ামালের কথাগুলো রিয়াল ড্রেসিংরুমে ঠিক কতটা আলোড়ন তুলেছিল।

“চোর” ও “অভিযোগপ্রিয়”—ইয়ামালের কটাক্ষে আগুন
সব শুরু বৃহস্পতিবার। কিংস লিগের এক লাইভ শোতে অতিথি ছিলেন ইয়ামাল। হালকা মজার এক মুহূর্তে তিনি বলেন, ‘রিয়াল তো সবসময়ই কান্নাকাটি করে আর চুরি করে।’

পরক্ষণেই ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, ‘বার্নাব্যুতে আমি আগেও গোল করেছি, মনে আছে তো? ৪–০ হয়েছিল, তাই না?’

এল ক্লাসিকোয় আগুন জ্বেলে এখন সমালোচনার মুখে ইয়ামাল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও থামেননি এই ১৮ বছর বয়সী উইঙ্গার। ম্যাচের আগের দিন নিজের আগের গোল উদযাপনের ছবিও পোস্ট করেন। উদ্দেশ্য—রিয়াল সমর্থকদের খেপানো। কিন্তু এবার সেই মজা গড়ে দেয় উল্টো প্রভাব।

আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নিস্তেজ ইয়ামাল

ম্যাচে ইয়ামাল ছিলেন একেবারেই নিজের ছায়া। বল স্পর্শ করেছেন ৭৯ বার, একবারও টার্গেটে শট নিতে পারেননি, আর বল হারিয়েছেন ২২ বার। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, আত্মবিশ্বাস যেন কোথাও উধাও।

এল ক্লাসিকোয় আগুন জ্বেলে এখন সমালোচনার মুখে ইয়ামাল

সহকারী কোচ মার্কুস সোরগ ম্যাচ শেষে বলেন, ‘ওর জন্য দিনটা সহজ ছিল না। দর্শকের চাপ, বাঁশি—এসব সামলাতে ও এখনো শিখছে। এটা স্বাভাবিক।’

আসলে ইয়ামাল এখনো পুরোপুরি ফিট নন। তার কুঁচকির চোটটা এখনো পুরো সারেনি, ক্লাব সূত্রে জানা গেছে—এই ব্যথা তাকে দীর্ঘ সময় পীড়া দিতে পারে।

বার্সার নতুন দোটানা

ইয়ামালের আচরণ ও তার পরিণতি এখন বার্সেলোনার জন্য এক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। ক্লাবের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় হিসেবে (মাত্র ১৮ বছর বয়সে) তার অবস্থান এতটাই প্রভাবশালী যে, কেউ যেন তাকে নির্দেশ দেওয়ার অবস্থানে নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—যে ছেলেকে মাঠে অবিশ্বাস্য সৃজনশীল হতে বলা হয়, তাকে কি মাঠের বাইরে হঠাৎ শান্ত, নিরীহ হয়ে যেতে বলা যায়?

ডি ইয়ংয়ের পক্ষে অবস্থান

ম্যাচ শেষে ফ্রেংকি ডি ইয়ং সতীর্থকে সমর্থন দিয়ে বলেন, ‘যদি কারভাহাল মনে করেন ইয়ামালের কথা ভুল, তাহলে ওকে ফোন করে বলতে পারতেন। মাঠে হাত দেখিয়ে, অঙ্গভঙ্গি করে অপমান করা ঠিক না। এতে আগুনই বাড়ে।’

এল ক্লাসিকোর এই অগ্নিগর্ভ অধ্যায় শেষ হলেও বিতর্ক এখানেই থেমে থাকছে না। রিয়াল ও বার্সেলোনার এই প্রজন্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে—যেখানে ইয়ামাল একাধারে প্রতিভা ও প্ররোচনার প্রতীক।

সমালোচনায় বিদ্ধ হলেও, এটাই হয়তো তার পরিণতির পথে সবচেয়ে বড় শিক্ষা। ১৮ বছরের এক কিশোর শিখছে, কীভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে টিকে থাকতে হয়—এবং কখনও কখনও, সেটারই নাম ‘এল ক্লাসিকো’।

মূল প্রতিবেদন: Pol Ballús, The Athletic