ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সরকারি কার্যালয় চত্বরে অনুমতি ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে এসিল্যান্ডের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের বাদানুবাদ হয়েছে। এ সময় এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে ভূমি অফিসের টিনের বেড়া জোরপূর্বক খুলে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া আশুগঞ্জ উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম এসিল্যান্ডকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) দুপুরে আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন। এদিকে বিকেলে অনুমতি ছাড়াই ভূমি অফিস কার্যালয়ের চত্বরে বিকেলে অনুষ্ঠান করছেন এনিসিপির নেতারা।
আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ বাজারে উপজেলা ভূমি কার্যালয় অবস্থিত। ভূমি কার্যালয়ের পেছনে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল ছিল। সেটি টিনের বেড়া দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের অনুষ্ঠান করতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এনিসিপির নেতাকর্মীরা যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও এসিল্যান্ডের অনুমতি না নিয়ে ভূমি কার্যালয় চত্বরে ঢুকেন এনসিপির নেতারা। তারা এক পর্যায়ে ঢেকে রাখা ম্যুরালের চারপাশ থেকে টিনের বেড়া সরিয়ে নেন। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাধা দেন। এ নিয়ে এসিল্যান্ডের সঙ্গে এনসিপির নেতাদের কথা কাটাকাটি হয়। আশুগঞ্জ উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম এক পর্যায়ে এসিল্যান্ডের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি দেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন বলেন, ‘অনুষ্ঠান করতে সকালে ভূমি অফিসের সীমানা দেওয়া জায়গা ভেঙে দিয়েছে এনিসিপির নেতারা। সরকারি জায়গায় অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠানে বাধা দিলে এনসিপির নেতা আমিনুল ইসলাম ডালিম উল্টো আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আমার সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। অনুষ্ঠানের বিষয়ে তারা কাউকে অবগত করেনি। ইউএনও তাদের অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানেন না। তারা অনুষ্ঠান করবেই বলে জানিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছিল। হুমকি দেওয়ায় এবং বাধা না মানায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আশুগঞ্জ থানায় জিডি করেছি।
তবে হুমকির বিষয়টি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন এনসিপির আশুগঞ্জ উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম ডালিম। তিনি বলেন, ‘বিকেল পাঁচটায় আশুগঞ্জের কাচারি পুকুর পাড়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে শহীদের স্মরণে মিলাদ মাহফিল করেছি। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের পেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল ছিল। ম্যুরালটি টিনের বেড়া ও গুনা দিয়ে তারা ঢেকে রেখেছিল।
বর্তমানে এটি মীর মুগ্ধ চত্বর বলে দাবি করেন তিনি।
আমিনুল ইসলাম ডালিম আরও বলেন, মিলাদ মাহফিলের জন্য মঙ্গলবার সকালে এনসিপির সদস্যরা সেখানে পরিস্কার করতে যান। এ কাজ করতে গিয়ে টিনের একটি বেড়া খুলে ছিল। এজন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফোন করে আমাদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। আমি বলেছিলাম আমাদের বাধা দিয়েন না। আমরা অনুষ্ঠানটি করে ফেলি। কিন্তু সেখানে অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ‘সরকারি অফিসের টিনের বেড়া সরিয়ে এনসিপির ব্যানারে জুলাই মঞ্চের নামে সমাবেশ করেছে। কিন্তু সরকারি অফিস, অফিসের নিরাপত্তা ও গোপনীয় নথি আছে এবং এখানে অনুষ্ঠান করতে দিতে পারি না। তারা কোথাও থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। বাধা দেওয়ায় এসিল্যান্ডের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে তারা। এনসিপির জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক আকিব জাবেদ উল্টো অনুষ্ঠানের অনুমতি দিতে বলেছেন। অনুমতি না দিলে আমরা নিজেরাই করে ফেলবে বলে জানিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।