
ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশে একটি পরিচিত এবং ভয়ের নাম। প্রতি বর্ষা মৌসুমে এই রোগটি নতুন করে ছড়িয়ে পড়ে, অনেককে হাসপাতালে নিয়ে যায়, আবার কারও কারও প্রাণও কেড়ে নেয়। কিন্তু সচেতন থাকলে এবং সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করা সম্ভব। চলুন জেনে নিই ডেঙ্গুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক সহজ ভাষায়।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশাগুলো সাধারণত দিনের বেলাতেই কামড়ায়, বিশেষ করে সকাল ও বিকালে। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি এডিস মশার কামড়ে পড়ে, সেই মশা আবার অন্য কাউকে কামড়ালে সে ব্যক্তিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়।
এই মশারা মূলত জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে— যেমন ফুলদানি, টায়ার, টব, ডাবের খোলা, ছাদে জমে থাকা পানি ইত্যাদি।
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো সাধারণত মশার কামড়ের ৪-৬ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। প্রধান লক্ষণগুলো হলো :
– হঠাৎ জ্বর (১০২-১০৫°F)
– চোখের পেছনে ব্যথা
– মাথাব্যথা, শরীরে, হাড়ে ও গাঁটে ব্যথা
– বমি বমি ভাব বা বমি
– ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা
– দুর্বলতা ও খাওয়ার অনীহা
– নাক বা মুখ থেকে রক্ত পড়া
– পায়খানায় বা বমিতে রক্ত
– পেটে পানি জমা, পেট ব্যথা
– শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
– প্লেটলেট (রক্তের কণিকা) কমে যাওয়া
ডেঙ্গুর এখনো কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
যা করবেন
– প্রচুর বিশ্রাম নিন
– অনেক পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, ফলের রস পান করুন
– প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে পারেন জ্বর বা ব্যথার জন্য (চিকিৎসকের পরামর্শে)
– নিয়মিত প্লেটলেট কাউন্ট চেক করুন
– চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না
যা করবেন না
– অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাবেন না (রক্তক্ষরণ বাড়াতে পারে)
– খাবারে বেশি তেল, ঝাল, চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাবেন না
– নিজে নিজে চিকিৎসা শুরু করবেন না
– কমলার রস – ভিটামিন সি বৃদ্ধি করে
– ডালিম – প্লেটলেট বাড়াতে সাহায্য করে
– ডাবের পানি – ডিহাইড্রেশন দূর করে
– পেঁপে পাতার রস – প্লেটলেট বাড়ায়
– হলুদ দুধ, মেথি, পালংশাক, ব্রকলি, কিউই – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
– ভাজাভুজি ও তৈলাক্ত খাবার
– অতিরিক্ত লবণ বা মশলাযুক্ত খাবার
– ক্যাফেইন (চা/কফি), অ্যালকোহল
– প্রসেসড বা প্যাকেটজাত খাবার
– মশার প্রজনন জায়গা ধ্বংস করুন – ফুলদানি, টব, টায়ারে জমে থাকা পানি প্রতি সপ্তাহে পরিষ্কার করুন
– মশারি ব্যবহার করুন – দিনে ঘুমানোর সময়ও মশারি টানুন
– ঘরের জানালা ও দরজায় জালি লাগান
– মশা তাড়ানোর স্প্রে বা লিকুইড ব্যবহার করুন
– চারপাশ পরিষ্কার রাখুন এবং ঝোপঝাড় পরিষ্কার করুন
– যদি দিনে ৩ বারের বেশি বমি হয়
– তীব্র পেটব্যথা হয়
– রক্তক্ষরণ শুরু হয়
– প্লেটলেট কমে যায়
– রোগী অতিরিক্ত দুর্বল বা অচেতন হয়ে পড়ে
ডেঙ্গু ভয়াবহ হতে পারে, তবে ভয় না পেয়ে সচেতন হলে ও সময়মতো চিকিৎসা নিলে আপনি ও আপনার প্রিয়জন সুস্থ থাকবেন। তাই বর্ষা এলেই সাবধান হন, মশা দমন করুন, আর জ্বর হলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
সুস্থ থাকুন, সতর্ক থাকুন।
সতর্কতা : এই তথ্যগুলো শুধু সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য। আপনার শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।