খুলনার কয়রা উপজেলায় সরকারী ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিড) সুবিধাভোগীদের কার্ড বিতরণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত অসহায় ও দরিদ্র বিধবা নারীদের কার্ড না দিয়ে টাকার বিনিময়ে সচ্ছল ও চাকরিজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তি এমনকি বিদেশে অবস্থানরতদের নাম ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে তালিকা বাতিল ও যাচাইবাছাই করার জন্য একাধিক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ।
জানা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অংশ হিসাবে দরিদ্র নারীদের জন্য উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৩২৫২ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। প্রতিটি কার্ডধারী নারীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে চাউল পাবেন। কিন্তু প্রকৃত অসহায় নারীরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তালিকায় নাম তুলছেন সচ্ছল ও সমাজের বিত্তবানরা। সদ্য প্রকাশিত ভিজিডির চূড়ান্ত তালিকায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর কার্ডের জন্য আবেদন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। অথচ যারা সচ্ছল ব্যাক্তি তারা বিভিন্নভাবে অর্থের বিনিময়ে জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে কার্ড নিচ্ছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের তালিকায় ১২৪ নং ক্রমিক নম্বরের রোজিনা বেগমের বাবা লুৎফার গাজী সৌদি প্রবাসী হয়েও কার্ড পেয়েছেন। তার প্রতিবেশী রোজিনা খাতুন বলেন, আমার স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত কিন্তু মেম্বারের কাছে বার বার গিয়েও কোনো কাজ হয়নি অথচ যিনি বিদেশ থাকেন তার নামে কার্ড হয়েছে। এমন চিত্র শুধু কয়রা সদরে নয় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে খবর নিলে এমন আর্থিক স্বচ্ছল অনেক ব্যক্তি পাওয়া যাবে যাদের নামে ভিডব্লিউবি কার্ড হয়েছে।
কয়রা সদরের ৮নং ওয়ার্ডের অসহায় নারী রেহানা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ডায়েবেটিস ও টিভি রোগে আক্রান্ত। কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। দুই সন্তানকে নিয়ে কখনো মাঠে আবার কখনো অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোনোভাবে সংসার চালাই। আমার কার্ড হয়নি।
আরেক স্বামী পরিত্যক্ত নারী সাহিদা খাতুন বলেন, আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে একটা প্রতিদ্বন্দ্বী সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি। কিন্তু আবেদন করার পরেও টাকা দিতি পারিনি বলে আমার কার্ড হয়নি।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফেরদাউস হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়ন থেকে পাঠানো তালিকার নাম বাদ দিয়ে নিজের মত করে যাচাই-বাছাই ছাড়া স্বচ্ছল ব্যক্তিদের অর্থের বিনিময়ে কার্ড দেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা। তাদের অনেকের পাকা বাড়ি আছে।
আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান (জুয়েল) জানান, আমাদের চূড়ান্ত করে দেওয়া নামের তালিকা থেকে ৪৫টি নাম যাচাই বাছাইয়ের কথা বলে কেটে বাদ দিয়েছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। অথচ যাচাইবাছাইকৃত উপকারভোগীদের এ নাম ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা না নিয়ে নিজের মত করে যারা পাওয়ার যোগ্য নয় পাকা বাড়ি ও আর্থিক স্বচ্ছল সেসব ব্যক্তিদের দিয়েছেন।
টাকার বনিময়ে সচ্ছল ব্যাক্তিদের কার্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সব মেম্বারদের দায়িত্ব দিয়েছি এমন অভিযোগ সত্য নয়।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও ভিডাব্লিউ কমিটির সদস্য সচিব মো. মনিরুজ্জামান অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা যে নাম পাঠায় সেটা আমরা অনুমোদন দেই। হয়তো মাঠপর্যায়ে গিয়ে সবাইকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি, এজন্য ভুল–ত্রুটি থাকতে পারে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভিডব্লিউ কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, কার্ড বিতরণে অনেক অনিয়মের অভিযোগ এসেছে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ লুৎফর রহমান হীরা
হেড অফিসঃ ১/ জি,আদর্শ ছায়ানীড়, রিংরোড, শ্যামলী, আদাবর ঢাকা - ১২০৭।
স্বত্ব © ২০২৫ চলনবিলের সময়