‘পাটের ব্যাপারীরা স্টক রেখে উচ্চ দামে বিক্রি করেন, আমরা ন্যায্য দাম পাই না’
:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি প্রকাশ: ২ মাস আগে
‘পাটের ব্যাপারীরা স্টক রেখে উচ্চ দামে বিক্রি করেন, আমরা ন্যায্য দাম পাই না’
চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাওরাঞ্চলে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। এখন গ্রামাঞ্চলে চলছে পাট কাটা, ‘পাট মারাই’ ও পাট শুকানোর কাজ। তবে মৌসুমের শুরুতে পাট পঁচানোর জন্য কাঙ্ক্ষিত পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ভাটি এলাকার বহু পাটচাষি বিপাকে পড়েন। কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচ বাড়লেও ন্যায্য দাম মিলছে না। এতে অনেকেই ধীরে ধীরে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। জেলা প্রশাসন বলেছে, এ বছর পাটের দাম নির্ধারণ করা হবে। পাটের অতীত ইতিহাসে একসময় ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট বিদেশে রফতানি হয়ে ছিল দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। সেই সোনালি দিন আর আগের মতো নেই। তারপরও বংশপরম্পরায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের পাটচাষিরা আবাদ করে যাচ্ছেন। চলতি বছর প্রতিকূল ও উষ্ণ...
2
চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাওরাঞ্চলে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। এখন গ্রামাঞ্চলে চলছে পাট কাটা, ‘পাট মারাই’ ও পাট শুকানোর কাজ। তবে মৌসুমের শুরুতে পাট পঁচানোর জন্য কাঙ্ক্ষিত পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ভাটি এলাকার বহু পাটচাষি বিপাকে পড়েন।
কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচ বাড়লেও ন্যায্য দাম মিলছে না। এতে অনেকেই ধীরে ধীরে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। জেলা প্রশাসন বলেছে, এ বছর পাটের দাম নির্ধারণ করা হবে।
পাটের অতীত ইতিহাসে একসময় ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট বিদেশে রফতানি হয়ে ছিল দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। সেই সোনালি দিন আর আগের মতো নেই। তারপরও বংশপরম্পরায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের পাটচাষিরা আবাদ করে যাচ্ছেন।
চলতি বছর প্রতিকূল ও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে পাটের আকার কিছুটা ছোট হলেও সামগ্রিক ফলন ভালো। প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদে এখন চলছে পাট কাটা, মারাই ও শুকানোর কাজ। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে জমির আশপাশে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট ‘গাদা’ করা ও পঁচানো নিয়ে কৃষকেরা হিমশিম খাচ্ছেন। এতে শ্রমের দাম ও উৎপাদন খরচ দুইই বেড়েছে; চাহিদা অনুযায়ী ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাওরাঞ্চলে পাটের ফলন ভালো হওয়ায় পাট কাটা, ‘পাট মারাই’ ও পাট শুকানোর কাজে ব্যস্ত চাষিরা। ছবি: চলনবিলের সময়
নাসিরনগর অঞ্চলের পাটচাষি মো. জাকির বলেন, ‘জমিতে পাটের আবাদ করতে গিয়ে এখন অনেক আর্থিক সমস্যায় পড়ছি। সারের দাম বেশি, হালচাষেও খরচ বেড়েছে। সব খরচ মিটিয়ে বিক্রির দামে আর পোষায় না। এখানে ব্যাপারীরাই লাভবান। তারা স্টক রেখে উচ্চ দামে বিক্রি করেন, পক্ষান্তরে আমরা ন্যায্য দাম পাই না। এ বছর ৩ হাজার ২০০ টাকা প্রতি মণ দরে পাট কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি নির্ধারিত দাম দিতো, আমরা সেই দামে বিক্রি করতে পারতাম।
আরেক চাষি মো. হারিজ মিয়া বলেন, ‘আমরা পাট করে খরচাপাতি মিটিয়ে শেষে গিয়ে পুঁজিই ফেরত পাই না; দামে গিয়ে খরচের সঙ্গে মেলে না। গতবার দাম না পাওয়ায় এ বছর অনেক কৃষক আবাদ করেননি। তার ওপর খালে প্রয়োজনীয় বর্ষার পানি না থাকায় পাট গাদা ও পঁচানোর জন্য অনেক দূরে যেতে হচ্ছে। শ্রম ও পরিবহন খরচ দুটোই বাড়ছে। কিন্তু দামের বেলায় সেই হিসাব মিলছে না। সরকার যদি একটা নির্ধারিত দাম দিতো, আমরা উপকৃত হতাম; কিছু টাকা হয়তো হাতে থাকতো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মোস্তফা এমরান হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে হাওরবেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নাসিরনগর, সরাইল, বিজয়নগর, নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মোট ৪ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে দেশি, কেনাফ, মেছতা ও তোষা জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৫৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি হয়েছে। এ বছর কেনাফ পাটের ফলন তুলনামূলক ভালো।
পাটের আবাদ ও বিক্রয় প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘নাসিরনগর পাট চাষের জন্য উপযোগী এলাকা। কিন্তু এ বছর পঁচানোর ক্ষেত্রে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে, কারণ পর্যাপ্ত পানি এখনও আসেনি। পানি বাড়লে কৃষকদের জন্য সুবিধা হবে। বাজার মনিটরিংয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে, যাতে কৃষকেরা তাদের প্রকৃত মূল্যটা পান। আমরা আশা করি এ বছর মূল্য নিয়ে বড় কোনো সমস্যা হবে না। আলোচনা চলছে; দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি বাজারমূল্য নির্ধারণ করে কৃষকদের জানিয়ে দেয়া হবে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে অন্তত ৬০ কোটি টাকার পাট বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।