পাবনায় সোনালি আঁশে হাসি ফিরেছে কৃষকের ঘরে

: পাবনা জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২ মাস আগে

12

বাজারে উঠতে শুরু করেছে কৃষকের সোনালি ফসল পাট। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। শুধু উৎপাদনই নয়, এবার বাজারে পাটের দামও বেশ ভালো, ফলে কৃষকের মুখে ফিরেছে হাসি। বলা যায়, সোনালি আঁশে আবারও সুদিন এসেছে পাবনার গ্রামবাংলায়।

সদর, সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগর ও চাটমোহর উপজেলার গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে—কৃষক-কৃষাণিরা এখন ব্যস্ত পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর কাজে। কোথাও নারী-পুরুষ মিলে পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন জলাশয়ে, আবার কোথাও শুকানো আঁশ কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন হাটে।

শনিবার বেড়ার আমাইকোলা পাটের হাটে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশজুড়ে পাটের সমারোহ। নতুন শুকানো আঁশের গন্ধ, কৃষকের খুশির হাসি আর দরদামের হাঁকডাকে হাট যেন উৎসবমুখর।

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর মৌসুমের শুরুতে নতুন পাটের দাম ছিল মণপ্রতি ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা। এবার সেই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। অর্থাৎ, কৃষকরা প্রতি মণে বাড়তি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পাচ্ছেন।

আমাইকোলা গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী বলেন, “এবার ফলন যেমন ভালো, তেমনি দামও মিলছে ভালো। প্রতি মণে হাজার-বারোশ টাকা লাভ হচ্ছে।”

সদর উপজেলার মাহমুদপুরের কৃষক আলীমুদ্দি জানান, “দুই বিঘা জমিতে পাট করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। তবে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।”

সদরের মালঞ্চির নূর মোহাম্মদ বলেন, “শ্রমিক খরচ এবার অনেক বেড়েছে। গত বছর যেখানে ৭০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যেত, এবার দিতে হচ্ছে ৮০০–৯০০ টাকা। তারপরও বর্তমানে ৩৭০০ থেকে ৩৯০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করছি।”

জেলার আতাইকুলা, হাজিরহাট, পুষ্পপাড়া, দাশুড়িয়া, অরনকোলা, বনগ্রাম, কাশিনাথপুর, চতুরহাট, দেবোত্তর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও সুজানগরের বিভিন্ন হাটে মানভেদে পাট বিক্রি হচ্ছে ৩৬০০ থেকে ৩৯০০ টাকা মণ দরে। তবে শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। আগে যেখানে প্রতি মণ পাট উৎপাদনে ২৩০০ টাকার মতো খরচ হতো, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০০–২৭০০ টাকা। তারপরও কৃষকরা বলছেন, দাম ভালো থাকায় সব পুষিয়ে যাচ্ছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জানান, চলতি বছর জেলার পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৫০০ হেক্টর, কিন্তু তা ছাড়িয়ে ৪২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। বিঘাপ্রতি গড়ে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯ মণ করে। তিনি বলেন, “ফলন ও দামের দিক দিয়ে কৃষকরা এ বছর লাভজনক অবস্থায় রয়েছেন। এখনো পূর্ণ সরবরাহ শুরু হয়নি, তবে আশানুরূপ দাম কৃষকরা পাবেন।”