বরিশালে শয়তানের নিঃশ্বাসের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। এক ধরনের চেতনানাশক বিশেষ পদ্ধতিতে নাকে দিয়ে সম্মোহিত করে একটি চক্র। গোপনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাওয়ার মেশিন স্থাপন করে শয়তানের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। সর্বস্ব হারিয়ে দিশাহার হয়ে পড়ছে ভুক্তভোগীরা।
সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এমন কয়েকটি ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বরিশালবাসী। তবে থানায় অভিযোগ দিয়েও সমাধান পাননি তারা। অপরাধ দমনে ব্যবস্থা গ্রহণের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি বরিশাল মহানগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ডেফুলিয়া এলাকার পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. রাহাত খানের ফার্মে ঘটেছে চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা। রাহাতের অভিযোগ, শয়তানের নিঃশ্বাস চক্র পাইপের মাধ্যমে চেতনা নাশক দিয়ে রাহাতকে সম্মোহিত করে এক বছরে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
স্থানীয় সাইদুল খান, শাওনসহ একাধিক বাসিন্দারা জানান, রাহাত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দুটি পিকাপে মুরগি আনা-নেওয়া করত। সেগুলো বরিশাল মহানগীরর বিভিন্ন বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করতেন। শয়তানের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। এসব কারণে হঠাৎ তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।
নগরীর রূপাতলী এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, রাহাতের সঙ্গে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন তারা। বছরে ৩০-৪০ লাখ টাকার মুরগি কিনতেন। পরে জানতে পারেন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে রাহাত। কেন এমন হয়েছে বুঝতে পারছেন না।
ভুক্তভোগী মো. রাহাত খান বলেন, একটা পাউডার মাটির নিচ দিয়ে পাইপের সাহায্যে আমার কক্ষে পাঠাতো একটা চক্র। এরপর তারা যা যা বলত তাই করত সে। দীর্ঘ এক বছর এইভাবে সম্মোহিত করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ব্যবসায়ী সেজে ফার্মে এমন অপকর্ম চালাত চক্রটি। এর সঙ্গে তার ফার্মের কর্মচারী এবং ব্যাংক কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ তার। এ ব্যাপারে মামলা করেও প্রতিকার পাননি দাবি রাহাতের।
ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী মো. রাহাত খানের ফার্মে শয়তানের নিঃশ্বাসের মাধ্যমের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটা চক্র। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশও করেছেন তারা। কিন্তু সুরাহা করতে পারেননি।
শুধু রাহাত নয়, এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বরিশাল নগরীর সাগরদী ধান গবেষণা রোড এলাকায় ঘটে একই ঘটনা। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) বরিশাল মহানগর যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মো. তানভীর আহমেদের মা তাহমিনা ডেইজি ফজরের নামাজ পদে রাস্তায় হাঁটতে বের হন। হাঁটা শেষে বাসায় ফেরার পথে শয়তানের নিঃশ্বাস চক্রের তিন সদস্য মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে শয়তানের নিঃশ্বাস ছড়িয়ে দেয়।
অর্ধচেতন তাহমিনার স্বর্ণের চেইন, বালা, খুচরো কিছু টাকা তখনই নিয়ে নেয় প্রতারক তিনজন। এরপর সুকৌশলে তাহমিনাকে দিয়েই তার বাসায় থাকা ১৬ ভরি স্বর্ণ ও ৪৬ হাজার টাকা বাগিয়ে নেয় চক্রটি।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন ডা. তানভীর আহমেদ। কিন্তু এরপরও ঘুম ভাঙেনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের। শয়তানের নিঃশ্বাস চক্রের সদস্যদের ধরতে দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না তাদের। এ নিয়ে নগরবাসী যেমন ক্ষুব্ধ, তেমনি শঙ্কিতও হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, একটা গ্যাস নাকে দিলে মানুষ ওই চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। শয়তানের নিঃশ্বাসের নামে নগরীতে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে মামলা না হওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছিল না। তবে পুলিশি তৎপরতায় বর্তমানে শয়তানের নিঃশ্বাস চক্র নিয়ন্ত্রণে আছে। এমন ঘটনায় অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। পূর্বে যেসব ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছেন সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ লুৎফর রহমান হীরা
হেড অফিসঃ ১/ জি,আদর্শ ছায়ানীড়, রিংরোড, শ্যামলী, আদাবর ঢাকা - ১২০৭।
স্বত্ব © ২০২৫ চলনবিলের সময়