
নাটোরের গুরুদাসপুরে পাখি শিকারিদের ফাঁদ থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি পানকৌড়ি ফিরে গেল তাদের আপন নীড়ে—প্রকৃতির কোলে। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার তুলাধোনা মাঠ এলাকায় এই হৃদয়ছোঁয়া দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী ও গ্রামবাসী।
গুরুদাসপুর জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সদস্য তানিম হোসেন জানান, স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ফাঁদ পেতে পানকৌড়ি ধরছিলেন। খবর পেয়ে কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাখিগুলো উদ্ধার করেন। পরে স্থানীয় সচেতন মানুষের উপস্থিতিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিকারিরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ভবিষ্যতে আর কখনও এমন কাজ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, “শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু মানুষ লাভের আশায় এসব পাখি ধরছে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত অভিযান চালিয়ে পাঁচটি পানকৌড়ি উদ্ধার করি। পরে স্থানীয়দের সামনে সেগুলোকে মুক্ত করে দিই।”
তিনি আরও বলেন, “প্রকৃতি আমাদের অস্তিত্বের অংশ। অতিথি পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই তাদের ভালোবাসা উচিত, হত্যা নয়। সবাইকে এই শপথ নিতে হবে— ‘পাখি বাঁচাও, প্রকৃতি বাঁচাও, শিকার নয়, সুরক্ষাই আমাদের দায়িত্ব।’”
স্থানীয় পরিবেশপ্রেমীরা জানান, গুরুদাসপুর ও চলনবিল এলাকায় প্রতি বছর শীতকালে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। কিন্তু কিছু অসচেতন শিকারির কারণে এসব পাখির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় ক্ষতির কারণ।
গুরুদাসপুর জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সদস্যরা নিয়মিতভাবে এলাকায় পাখি শিকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের বিশ্বাস, স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যম ও জনগণ একযোগে সচেতন হলে শিকার বন্ধ করা সম্ভব।
তুলাধোনা মাঠে মুক্ত আকাশে উড়ে যাওয়া পানকৌড়িগুলোর দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রকৃতির এই মুক্তি যেন মনে করিয়ে দেয়— প্রতিটি প্রাণের স্বাধীনতাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।