সন্তান যেন অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে—এটি প্রতিটি পিতা-মাতার সহজাত আকাঙ্ক্ষা। তবে সেই আকাঙ্ক্ষা যদি অতিরিক্ত চাপ বা জোরজবরদস্তিতে পরিণত হয়, তবে তা শিশুর মানসিক ও সৃজনশীল বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
❖ প্রতিভা কি জোর করে তৈরি হয়?
মানব শিশু জন্ম থেকে একটি স্বতন্ত্র মস্তিষ্ক, বুদ্ধিমত্তা এবং আগ্রহ নিয়ে বেড়ে ওঠে। একটি শিশু যেমন হয়তো অঙ্কে দুর্দান্ত, তেমনি আরেকজন হতে পারে চিত্রাঙ্কন বা সংগীতে প্রতিভাবান। কিন্তু অনেক পরিবারে দেখা যায়—পড়াশোনায় "ভালো ফলাফল" বা "বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া" এই একমাত্র মাপকাঠিতে সন্তানের প্রতিভা পরিমাপ করা হয়।
পরিণামে ঘটে কি?
– শিশুরা মানসিক চাপে ভোগে
– আতঙ্কে নিজের সৃজনশীলতা গোপন করে
– আত্মবিশ্বাস হারায়
– অনেক ক্ষেত্রে বিষণ্নতা বা আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দেয়
❖ বিজ্ঞান কী বলে?
যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জোরপূর্বক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বড় হওয়া শিশুরা দীর্ঘমেয়াদে সৃজনশীলতা হারায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক সমস্যায় ভোগে। অন্যদিকে, যারা নিজের আগ্রহ ও কৌতূহল অনুসারে শিখতে পায়, তারা আত্মবিশ্বাসী, উদ্ভাবনী এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।
❖ বাংলাদেশের বাস্তবতা
দেশের অনেক শিক্ষার্থী বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের যুদ্ধে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। একজন চাটমোহরের শিক্ষার্থী বলেন—
> "আমি ডাক্তার হতে চাইনি, কিন্তু পরিবারের চাপে পড়াশোনা করছি। এখন আর কিছু ভালো লাগে না।"
এমন বাস্তবতা বদলাতে হলে প্রয়োজন—
❖ সচেতন অভিভাবক
সন্তানের কথাগুলো শোনা
তার ভালো লাগা ও আগ্রহ বোঝা
ব্যর্থ হলেও উৎসাহ দেওয়া
পারফর্ম্যান্সের চাইতে প্রচেষ্টার প্রশংসা করা
❖ সমাধান ও পরামর্শ
1. সহানুভূতিশীল হোন: প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সন্তানকে সময় দিন শুধু ওর কথা শুনতে
2. চাপ নয়, সুযোগ দিন: শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে চেষ্টা করতে দিন—শুধু একটাতে আটকে রাখবেন না
3. ভুলকে শেখার অংশ ভাবুন: ব্যর্থতা মানেই শেষ নয়, বরং শেখার সুযোগ
4. স্কুল-শিক্ষকদের সহযোগিতা চান: তারা আপনার সন্তানের গাইড হোক—চাপের উৎস নয়।
সন্তানের প্রতিভা কোন মেশিন নয় যে জোরে-জবরদস্তিতে বাড়ানো যাবে। এটি একটি বীজ, যা যত্ন, সময়, সহানুভূতি ও সঠিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে। জোর করে চাপ দিলে তা হয়তো অঙ্কে ১০০ পেতে পারে, কিন্তু জীবন যুদ্ধে হেরে যেতে পারে। তাই আসুন, সন্তানকে প্রতিভাবান বানাতে চাইলে প্রথমে ওকে মানুষ হতে দেই।
লেখক- লুৎফর রহমান হীরা
সম্পাদক ও প্রকাশক
চলনবিলের সময়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ লুৎফর রহমান হীরা
হেড অফিসঃ ১/ জি,আদর্শ ছায়ানীড়, রিংরোড, শ্যামলী, আদাবর ঢাকা - ১২০৭।
স্বত্ব © ২০২৫ চলনবিলের সময়