সালথায় করলা চাষে কৃষকদের ভাগ্যবদল, বাড়ছে আবাদ ও কর্মসংস্থান

: ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩ দিন আগে

29

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে করলা চাষ। লাভজনক এই ফসল এখন অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। বাজারে করলার চাহিদা ও মূল্য দুটোই ভালো থাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে এর আবাদ। কৃষি বিভাগ বলছে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানী ও আশপাশের জেলায় নতুন পাইকারি বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

সালথা উপজেলার বল্লভদী এলাকার মডেল কৃষক মিলন ফকির করলা চাষে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রায় আট থেকে দশ বছর আগে তিনি মাত্র এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে করলা চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই ভালো লাভে উৎসাহিত হয়ে ধীরে ধীরে বাড়ান আবাদ। বর্তমানে তিনি প্রায় ছয় একর জমিতে করলা চাষ করছেন। প্রতিদিন তার জমি থেকে ২০ থেকে ২৫ মণ করলা বিক্রি হচ্ছে, যা পাইকাররা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে কিনে রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে সরবরাহ করছেন।

মিলন ফকির বলেন, “আগে নানা ফসলে লোকসান গুনে কৃষিকাজ থেকে মন উঠে যাচ্ছিল। কিন্তু করলা চাষ আমাকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে। এখন এই চাষে ভালো লাভ হচ্ছে, অনেক কৃষকই আমার অনুপ্রেরণায় করলা আবাদে নেমেছেন।”

তার ভাই সাকিব আল হাসান, নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পড়ালেখার পাশাপাশি ভাইয়ের সঙ্গে করলা চাষে যুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, “করলা চাষে আমরা ভালো আয় করছি। এখন এলাকার অনেক যুবক আমাদের সহযোগিতায় করলা চাষ শুরু করেছেন এবং সফলতাও পাচ্ছেন।”

স্থানীয় মোশারফ ফকির বলেন, “করলা চাষে যত্ন নিতে হয়। নিয়মিত ওষুধ ও সার প্রয়োগ করতে হয়। শুরু থেকেই পরিচর্যা ভালো হলে ফলনও অনেক বেশি পাওয়া যায়।”

স্থানীয়রা বলছেন, করলার আবাদ দ্রুত বাড়ছে। এতে একদিকে কৃষকের আয় বাড়ছে, অন্যদিকে জমিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক নারী মাঠে করলা সংগ্রহ করে বাড়তি উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, যদি নতুন বাজার সৃষ্টি না হয়, ভবিষ্যতে বিপণন সংকট দেখা দিতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন,চলতি মৌসুমে সালথা উপজেলায় প্রায় ৫৫ হেক্টর জমিতে করলাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে করলাই প্রধান ফসল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী জেলায় নতুন বাজার গড়ে তুলতে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে সালথা শিগগিরই “করলার রাজধানী” হিসেবে পরিচিতি পাবে।