মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের অধিকাংশ এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই আবহাওয়া ডেঙ্গুর সংক্রমণকে দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গুর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে মোট শনাক্ত রোগীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিল সেপ্টেম্বরে। সে বছরের ডেঙ্গু মৃত্যুর প্রায় এক-চতুর্থাংশও ঘটে একই মাসে। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে সংক্রমণ আরও বেড়েছিল। চলতি বছর জুলাই ও আগস্টে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সেই ধারা আবারও শুরু হয়েছে। গত সাত দিনে প্রায় তিন হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৭০৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে মৃত্যু হয়েছে ১৩৫ জনের। শুধুমাত্র সেপ্টেম্বরে প্রথম সাত দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। আগস্টে আক্রান্ত হয়েছিল ১০ হাজার ৪৯৬ জন, মারা গিয়েছিল ৩৯ জন। জুলাইয়ে ভর্তি হয়েছিল ১০ হাজার ৬৮৪ জন এবং মারা গিয়েছিল ৪১ জন।
গতকাল রোববার আরও তিনজন মারা গেছে এবং নতুন ভর্তি হয়েছে ৫৮০ জন। বিভাগভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি ভর্তি রোগী বরিশালে (১২৪ জন)। এরপর চট্টগ্রামে ৯৪, ঢাকা উত্তরে ৮৫, ঢাকা দক্ষিণে ৮০, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ৮৫, রাজশাহীতে ৫৫, খুলনায় ৩২, ময়মনসিংহে ১৭, রংপুরে তিন এবং সিলেটে একজন। একই দিনে ৫৫২ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।
গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৩ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন। ২০২২ সালে ভর্তি হয়েছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন, ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। করোনাকালে ২০২০ সালে সবচেয়ে কম, মাত্র ১ হাজার ৪০৫ জন ভর্তি হয়েছিল। এ হিসেবে ২০২৪ সাল বর্তমানে ডেঙ্গু সংক্রমণের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা সতর্ক করেছেন, সেপ্টেম্বরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও জমে থাকা পানি এডিস মশার বিস্তার ঘটায়। এর ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণ বেশি থাকে। তবে গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ও নভেম্বরে সংক্রমণের ঝুঁকিও সমানভাবে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসেই ডেঙ্গুর বিস্তার মারাত্মক আকার নিয়েছে। মৌসুমি বৃষ্টির কারণে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়। গত বছর অক্টোবর ও নভেম্বরে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছিল। এ বছরও সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। আগামী তিন মাস ডেঙ্গুর বিস্তার আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন।
বাড়ির আঙিনা ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে
তিন দিনের বেশি জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে
ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে
উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগস্টের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে অক্টোবর ও নভেম্বরেও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ লুৎফর রহমান হীরা
হেড অফিসঃ ১/ জি,আদর্শ ছায়ানীড়, রিংরোড, শ্যামলী, আদাবর ঢাকা - ১২০৭।
স্বত্ব © ২০২৫ চলনবিলের সময়