দীর্ঘ ২১ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে অফিস সহায়ক সফিউল আলমের বিরুদ্ধে। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সরেজমিন বিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথিপত্র এবং কর্মচারী হাজিরা খাতা দেখে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২২ মে নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে যোগদান করেন সফিউল আলম। যোগদানের পর থেকে বেশ কয়েক বছর নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও ২০২২ সাল থেকে তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না।
হাজিরা খাতা অনুযায়ী, সফিউল আলম ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত টানা ১৮ মাস বিদ্যালয়ে এক দিনও উপস্থিত ছিলেন না। এ ছাড়া ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুই দিন এবং অক্টোবর ও নভেম্বর টানা দুই মাস এক দিনও উপস্থিত ছিলেন না এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেননি।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে সফিউল আলম প্রতি মাসের শুরুতে বিদ্যালয়ে এক দিন বা দুই দিনের জন্য এসে হাজিরা খাতায় একসঙ্গে পূর্বের পুরো মাসের স্বাক্ষর করেন। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে এক দিন এসে ১৬ তারিখ পর্যন্ত স্বাক্ষর করেন। এরপর ১৭, ১৮ এবং ২০ তারিখ বিদ্যালয় খোলা থাকলেও কোনো মৌখিক বা লিখিত ছুটি না নিয়েই অনুপস্থিত ছিলেন।
এরপর ২২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে এলেও এক দিনে ২২ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত স্বাক্ষর করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের মালি নুরুজ্জামানের স্বাক্ষরের ঘরে স্বাক্ষর করে চলে যান। পরে মালি নুরুজ্জামান বিষয়টি বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং প্রধান শিক্ষককে অবগত করলে বিষয়টি সামনে আসে।
এদিকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্য়য়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী অফিস সহায়ক সফিউল আলমকে চেনেন না। ছবি দেখানো হলে তারা জানান, তাকে বিদ্যালয়ে কখনো আসতে দেখেন না। হঠাৎ মাসে এক-দুদিন দেখা যায়, সারা মাস তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় না।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এহতেসাব রহমান বলেন, সফিউল নামে আমাদের স্কুলে একজন পিয়ন আছেন। আমি এই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর তাকে এক-দুবার দেখেছি। তিনি নিয়মিত না আসায় আমাদের স্কুলের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে বেশ অসুবিধা হয়।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ বলেন, সুফি আংকেলকে গত ১০ মাস ধরে মাসে একবার দুবার দেখেছি। তা ছাড়া আর কখনো দেখিনি।
একাধারে ২১ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা এবং পরে মাসে এক-দুদিন এসে পুরো মাসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহায়ক শফিউল আলম প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। পরে তিনি প্রতিবেদককে সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি আপনাদের ছোট ভাই। এবারের মতো মাফ করে দেন, সামনে থেকে এমন হবে না।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অফিস সহায়ক সফিউল আলম প্রতি মাসের বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবে গ্রহণ করেছেন। শফিউল আলম এই ২ বছর ১০ মাসে বেতন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাতা বাবদ মোট ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫১ টাকা পান। এর মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ বিভিন্ন খাতে টাকা কর্তন হওয়ার পর তিনি ৯ লাখ ৫০ হাজার ৯০৮ টাকা উত্তোলন করেন। এই সময়ের মধ্যে অনুপস্থিত থাকার কারণে সফিউল আলমের বেতন কর্তন বা স্থগিতের কোনো নির্দেশনা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে আসেনি।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. জাহানারা বেগম বলেন, নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায় সফিউল আলম প্রতি মাসেই নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। ডিডিও আইবাসে তার বেতন সাবমিট করেছে আমার সেটা ইএফটি করেছি।
নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জি. এম. রুহুল আমিন বলেন, আমি দায়িত্ব পেয়েছি দুই মাস আগে। সে সপ্তাহে এক-দুদিন করে আসত। এর মাঝে ছুটিতে স্কুল বন্ধ ছিল এবং বিভিন্ন কারণে বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। এখন যেহেতু পুরো বিষয়টি জানলাম, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে কৈফিয়ত তলব করব।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সেই কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, রংপুরের উপপরিচালক মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেই কর্মচারীর বিষয়ে আমাদের লিখিতভাবে জানাননি। যেহেতু তিনি সরকারি কর্মচারী—তাদের উচিত ছিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্ৰহণ করব।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ লুৎফর রহমান হীরা
হেড অফিসঃ ১/ জি,আদর্শ ছায়ানীড়, রিংরোড, শ্যামলী, আদাবর ঢাকা - ১২০৭।
স্বত্ব © ২০২৫ চলনবিলের সময়