ঢাকা ০৬:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে ১৯ Logo চাটমোহরের হান্ডিয়াল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম সবুর মিঞা আর নেই Logo বগুড়ায় “চলনবিলের সময়” পত্রিকার সাংবাদকর্মীদের মাঝে হাসিমুখে পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র প্রদান Logo মেধাভিত্তিক দেশ গঠনে শিক্ষা অপরিহার্য: ব্যারিস্টার অসীম Logo রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা Logo জুলাই যোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটা থাকছে না : মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা Logo ৮ দফা দাবিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেছেন শিক্ষার্থীরা Logo বিআরটিএ পাবনা সার্কেলের অভিযানে ১২ টি মামলা ও ২৯ হাজার টাকা জরিমানা Logo পদ্মার ভাঙনে সুজানগরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শ শ বাড়ীঘর ও ফসলী জমি Logo ৭ম জন্মদিনে স্বপ্নকে শাজাহানপুর প্রেসক্লাবের উষ্ণ অভিনন্দন!
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

অনুসন্ধান সন্দ্বীপের কৃষি—২

কৃষককে মাঠে ফেরাবে কে

পরিবর্তন টিভি নিউজ ডেস্ক,
  • আপডেট সময় : ০৭:২৬:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ৬৮ বার পড়া হয়েছে

লবণাক্ততা বাড়লেও তা মোকাবিলায় সেচের ব্যবস্থা নেই। দূর থেকে পানি এনে জমিতে দিতে হয়। সন্দ্বীপের বাউরিয়ায়।ছবি সংগৃহিত

চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

করতে পারেনি। গত বছর হারামিয়া ইউনিয়নের মো. মাইনুদ্দিন সূর্যমুখীর বীজ পেলেও তিনি চাষ করেননি। তিনি  জানতে চেয়েছেন, এটা কীভাবে চাষ করব? আগে চারা করব নাকি মাটিতে বীজ পুঁতে দেব?

কৃষি ছাড়ার হুমকি কৃষকের

ইতিপূর্বে উত্তরবঙ্গের একটি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করে আসা কৃষি কর্মকর্তা মারুফ হোসেনও সন্দ্বীপের কৃষিকে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের চরম পরিস্থিতির মুখোমুখি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে তাঁর দপ্তরের প্রস্তুতি বা কৃষি অভিযোজনের বিষয়ে কোনো সুখবর তিনি দিতে পারেননি।

বছরের আট মাস পতিত থাকা সন্দ্বীপের কৃষিজমিতে যে অল্পসংখ্যক কৃষক এখনো কৃষিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন, তাঁদের চাওয়া খুবই সুনির্দিষ্ট। খরা, নুনা, রোগবালাই আর দুর্যোগের মুখে টিকে থাকার কৌশল জানতে চান তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, কৃষকের ন্যায্য প্রাপ্য যেন কৃষকই পায়। কৃষকদের কাছে প্রথম আলোর একটি প্রশ্ন ছিল, ‘কৃষিকাজ ছেড়ে দেওয়া মানুষেরা পরবর্তিতে কী কাজ করছেন?’ কৃষকেরা জানিয়েছেন, যাঁরা চাষ ছেড়ে দিয়েছেন বা বেকার, তাঁরা অটোরিকশা চালানো, মাছ ধরা, মাটি পরিবহনের ট্রাকে শ্রম দেওয়া অথবা বদলা খাটার মতো কাজ করছেন।

সমীক্ষায় ৪০ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন, এভাবে চলতে থাকলে কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে পারেন তাঁরা। অন্যদিকে সেচের পানি, নুনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ পেলে চাষাবাদ বাড়ানোর কথা বলেছেন শতভাগ কৃষক। সন্তোষপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক দিলদার বলেন, ‘এইভাবে চইলতে থাইকলে চাষ ছাড়ি বেকার থাকন ভালা। টাকা আর পরিশ্রম হিসাব কইরলে লাভ কই? তার উপর এত বালা-মুছিবত আর রোগবালাই সহ্য অইতেছে না।

জমি পতিত, দায় কার?

কৃষি ও কৃষকের সমস্যা দূর করতে কাজ করছে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু কৃষিকে সম্প্রসারণের দায়িত্ব পাওয়া দপ্তরটির কর্মকর্তারাই ঠিক করতে পারেননি, ঠিক কী ধরনের উদ্যোগ সন্দ্বীপের কৃষকদের একটি লাভজনক ও টেকসই কৃষিজীবিকার পথ দেখাতে পারে।

কৃষিজমি পতিত রাখার ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ কী রকম হতে পারে, জানতে চাইলে সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইনে পতিত জমি সরকারের কাছে ন্যস্ত করার বিধান থাকলেও দেশে কখনো এই আইনের প্রয়োগ হয়নি। এই আইন দিয়ে কৃষক বা জমির মালিকের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে।’

তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম পরিস্থিতি কীভাবে কৃষককে কৃষিজীবিকা থেকে ছিটকে দিচ্ছে, তা সবিস্তার তুলে ধরে ‘স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাহী হিসেবে দায় এড়াতে পারেন কি না’ প্রশ্ন করলে তিনি ‘কিছুটা দায় নিতে প্রস্তুত’ বলে জানান। নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ বাড়ার পর সন্দ্বীপের কৃষিতে কী ধরনের উদ্যোগ ও মনোযোগ প্রয়োজন, সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার তথ্য আমার জানা নেই। এ বিষয়ে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা চালাব।’

জলবায়ুর পরিবর্তন মাঠ থেকে কৃষককে দূরে ঠেললেও ‘কারও না কারও ফিরিয়ে আনার দায় আছে’ বলে মনে করেন জলবায়ুবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তাঁর মতে, জলবায়ুর পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হলেও এর প্রভাব বেশি পড়ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কৃষক ও শ্রমজীবীদের ওপর। যেহেতু এই পরিবর্তন মোকাবিলার ব্যবস্থা আমাদের নেই, সেহেতু এর সঙ্গে কৃষকদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। প্রকৃতির নিয়মে কৃষকেরা নিজে নিজেই অভিযোজন ক্ষমতা অর্জন করবেন কিন্তু সেই ক্ষমতা দ্রুত অর্জন করার কলাকৌশল ও নীতি নির্ধারণের প্রধান দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর।

খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায় আছে কৃষককে মাঠে ফেরানোর। দায় আছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থারও। কিন্তু তাঁদের দায় অস্বীকারের চেষ্টা বা কৃষকের প্রকৃত দুর্ভোগ উপলব্ধির ব্যর্থতার খেসারত দিচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তনে সংকটে পড়া হাজারো কৃষক।

সূত্রঃ প্রথম আলো

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

অনুসন্ধান সন্দ্বীপের কৃষি—২

কৃষককে মাঠে ফেরাবে কে

আপডেট সময় : ০৭:২৬:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

করতে পারেনি। গত বছর হারামিয়া ইউনিয়নের মো. মাইনুদ্দিন সূর্যমুখীর বীজ পেলেও তিনি চাষ করেননি। তিনি  জানতে চেয়েছেন, এটা কীভাবে চাষ করব? আগে চারা করব নাকি মাটিতে বীজ পুঁতে দেব?

কৃষি ছাড়ার হুমকি কৃষকের

ইতিপূর্বে উত্তরবঙ্গের একটি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করে আসা কৃষি কর্মকর্তা মারুফ হোসেনও সন্দ্বীপের কৃষিকে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের চরম পরিস্থিতির মুখোমুখি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে তাঁর দপ্তরের প্রস্তুতি বা কৃষি অভিযোজনের বিষয়ে কোনো সুখবর তিনি দিতে পারেননি।

বছরের আট মাস পতিত থাকা সন্দ্বীপের কৃষিজমিতে যে অল্পসংখ্যক কৃষক এখনো কৃষিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন, তাঁদের চাওয়া খুবই সুনির্দিষ্ট। খরা, নুনা, রোগবালাই আর দুর্যোগের মুখে টিকে থাকার কৌশল জানতে চান তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, কৃষকের ন্যায্য প্রাপ্য যেন কৃষকই পায়। কৃষকদের কাছে প্রথম আলোর একটি প্রশ্ন ছিল, ‘কৃষিকাজ ছেড়ে দেওয়া মানুষেরা পরবর্তিতে কী কাজ করছেন?’ কৃষকেরা জানিয়েছেন, যাঁরা চাষ ছেড়ে দিয়েছেন বা বেকার, তাঁরা অটোরিকশা চালানো, মাছ ধরা, মাটি পরিবহনের ট্রাকে শ্রম দেওয়া অথবা বদলা খাটার মতো কাজ করছেন।

সমীক্ষায় ৪০ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন, এভাবে চলতে থাকলে কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে পারেন তাঁরা। অন্যদিকে সেচের পানি, নুনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ পেলে চাষাবাদ বাড়ানোর কথা বলেছেন শতভাগ কৃষক। সন্তোষপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক দিলদার বলেন, ‘এইভাবে চইলতে থাইকলে চাষ ছাড়ি বেকার থাকন ভালা। টাকা আর পরিশ্রম হিসাব কইরলে লাভ কই? তার উপর এত বালা-মুছিবত আর রোগবালাই সহ্য অইতেছে না।

জমি পতিত, দায় কার?

কৃষি ও কৃষকের সমস্যা দূর করতে কাজ করছে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু কৃষিকে সম্প্রসারণের দায়িত্ব পাওয়া দপ্তরটির কর্মকর্তারাই ঠিক করতে পারেননি, ঠিক কী ধরনের উদ্যোগ সন্দ্বীপের কৃষকদের একটি লাভজনক ও টেকসই কৃষিজীবিকার পথ দেখাতে পারে।

কৃষিজমি পতিত রাখার ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ কী রকম হতে পারে, জানতে চাইলে সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইনে পতিত জমি সরকারের কাছে ন্যস্ত করার বিধান থাকলেও দেশে কখনো এই আইনের প্রয়োগ হয়নি। এই আইন দিয়ে কৃষক বা জমির মালিকের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে।’

তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম পরিস্থিতি কীভাবে কৃষককে কৃষিজীবিকা থেকে ছিটকে দিচ্ছে, তা সবিস্তার তুলে ধরে ‘স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাহী হিসেবে দায় এড়াতে পারেন কি না’ প্রশ্ন করলে তিনি ‘কিছুটা দায় নিতে প্রস্তুত’ বলে জানান। নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ বাড়ার পর সন্দ্বীপের কৃষিতে কী ধরনের উদ্যোগ ও মনোযোগ প্রয়োজন, সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার তথ্য আমার জানা নেই। এ বিষয়ে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা চালাব।’

জলবায়ুর পরিবর্তন মাঠ থেকে কৃষককে দূরে ঠেললেও ‘কারও না কারও ফিরিয়ে আনার দায় আছে’ বলে মনে করেন জলবায়ুবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তাঁর মতে, জলবায়ুর পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হলেও এর প্রভাব বেশি পড়ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কৃষক ও শ্রমজীবীদের ওপর। যেহেতু এই পরিবর্তন মোকাবিলার ব্যবস্থা আমাদের নেই, সেহেতু এর সঙ্গে কৃষকদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। প্রকৃতির নিয়মে কৃষকেরা নিজে নিজেই অভিযোজন ক্ষমতা অর্জন করবেন কিন্তু সেই ক্ষমতা দ্রুত অর্জন করার কলাকৌশল ও নীতি নির্ধারণের প্রধান দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর।

খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায় আছে কৃষককে মাঠে ফেরানোর। দায় আছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থারও। কিন্তু তাঁদের দায় অস্বীকারের চেষ্টা বা কৃষকের প্রকৃত দুর্ভোগ উপলব্ধির ব্যর্থতার খেসারত দিচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তনে সংকটে পড়া হাজারো কৃষক।

সূত্রঃ প্রথম আলো