জমি পতিত, দায় কার?
কৃষি ও কৃষকের সমস্যা দূর করতে কাজ করছে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু কৃষিকে সম্প্রসারণের দায়িত্ব পাওয়া দপ্তরটির কর্মকর্তারাই ঠিক করতে পারেননি, ঠিক কী ধরনের উদ্যোগ সন্দ্বীপের কৃষকদের একটি লাভজনক ও টেকসই কৃষিজীবিকার পথ দেখাতে পারে।
কৃষিজমি পতিত রাখার ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ কী রকম হতে পারে, জানতে চাইলে সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইনে পতিত জমি সরকারের কাছে ন্যস্ত করার বিধান থাকলেও দেশে কখনো এই আইনের প্রয়োগ হয়নি। এই আইন দিয়ে কৃষক বা জমির মালিকের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে।’
তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম পরিস্থিতি কীভাবে কৃষককে কৃষিজীবিকা থেকে ছিটকে দিচ্ছে, তা সবিস্তার তুলে ধরে ‘স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাহী হিসেবে দায় এড়াতে পারেন কি না’ প্রশ্ন করলে তিনি ‘কিছুটা দায় নিতে প্রস্তুত’ বলে জানান। নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ বাড়ার পর সন্দ্বীপের কৃষিতে কী ধরনের উদ্যোগ ও মনোযোগ প্রয়োজন, সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার তথ্য আমার জানা নেই। এ বিষয়ে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা চালাব।’
জলবায়ুর পরিবর্তন মাঠ থেকে কৃষককে দূরে ঠেললেও ‘কারও না কারও ফিরিয়ে আনার দায় আছে’ বলে মনে করেন জলবায়ুবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তাঁর মতে, জলবায়ুর পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হলেও এর প্রভাব বেশি পড়ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কৃষক ও শ্রমজীবীদের ওপর। যেহেতু এই পরিবর্তন মোকাবিলার ব্যবস্থা আমাদের নেই, সেহেতু এর সঙ্গে কৃষকদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। প্রকৃতির নিয়মে কৃষকেরা নিজে নিজেই অভিযোজন ক্ষমতা অর্জন করবেন কিন্তু সেই ক্ষমতা দ্রুত অর্জন করার কলাকৌশল ও নীতি নির্ধারণের প্রধান দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর।
খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায় আছে কৃষককে মাঠে ফেরানোর। দায় আছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থারও। কিন্তু তাঁদের দায় অস্বীকারের চেষ্টা বা কৃষকের প্রকৃত দুর্ভোগ উপলব্ধির ব্যর্থতার খেসারত দিচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তনে সংকটে পড়া হাজারো কৃষক।
সূত্রঃ প্রথম আলো