ঢাকা ১২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

সূর্যমুখীর ফুলের হাসিতে কৃষকের আনন্দ, সৌন্দর্য পিয়াসীদের ভিড়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি,পরিবর্তন টিভি
  • আপডেট সময় : ০৬:৩২:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৬০ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সূর্যমুখী ফুলের হাসিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষকের মুখে মুখে এখন হাসির ঝলক। গত ১০ বছর ধরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

এ বছর জেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়া কারণে ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ৯৭ মেট্রিক টন তেল উৎপাদন করা হবে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল শহরসহ আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসীরা দল বেধে আসেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। অনেকেই বাগানে ঢুকে শখ করে ছবি তুলেন। দেখা যায়, কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত কেউবা পরিবারের ছবি তুলতে ব্যস্ত, আবার কেউ ঘুরে ঘুরে বাগান দেখছেন। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

এদিকে কৃষকরা বলছেন অল্প পুঁজিতে সূর্যমুখী চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে আগামী দিনে ভালো ফলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের খেওয়াই গ্রাম, রামরাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রাম, ও পৌর এলাকার ভাদুঘর, নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর ঘুরে দেখা গেছে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। চাষিরা জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন গ্রামের জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ, হলুদের সমাহার। প্রতিটি বাগানেই মৌমাছির দল গুনগুন শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মৌমাছিরা সূর্যমুখী ফুল থেকে মধু নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। গ্রামে সূর্যের মতো হাসি দেওয়া হলুদ আভা ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন বাগানে আসছেন ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

রসূলপুর সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা জেলা শহরের কাজীপাড়ার রফিক বলেন, এখানে আসার পর দেখলাম জায়গাটি খুব সুন্দর। সূর্যমুখী বাগানে প্রথমবারের মতো আসলাম পরিবার নিয়ে। আমরা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারছি। সূর্যমুখী ফুল দেখেও খুব ভালো লাগল।

তমা নামে আরেকজন বলেন, ফুল দেখে খুব ভালো লেগেছে। এখানে ঘুরতে আসলে মানুষ নিরাস হবে না। এই ফুল থেকে আবার তেলও তৈরি হয়। এই তেল খুব দামি। একই সঙ্গে তেল ও ফুল দুইটাই খুব ভালো। মানুষের উচিত বেশি বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করা।

ভাদুঘর সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা মহিনী বেগম জানান, বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছি। ফেসবুকে অনেকেই দেখি সূর্যমুখী বাগানে ঘোরার ছবি দিচ্ছে। সেই লোভেই বাগানে ঘুরতে আসা। এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে। এই প্রথম সূর্যমুখী বাগান দেখলাম।

রসূলপুর বাগান মালিক জয়নাল আবেদিন জানান, এখানে ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। তিন বিঘা জমি চাষে আমাদের প্রয় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যে ফুল এখন গাছে আছে তা দিয়ে আশা করছি লাভবান হতে পারব।

পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের চাষি শাহানুর ভূইয়া জানান, আগে তিনি তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতেন। গত কয়েক বছর ধরে সদর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি তার জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছিলেন। বেশ ভালোই ব্যবসা হয়েছে। তাই এই বছর ও সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছি।

তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশাকরি এবারও সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানা বেগম বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ করা হয়। সদর উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে ৩০ জন কৃষক প্রমোদনার আওতায় এই সূর্যমুখী চাষাবাদ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন জানান, সূর্যমুখী চাষ জমির উর্বরতার জন্য ভালো। এতে পোকামাকড় আক্রমণ করে কম। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাষাবাদ হলে পর্যটকদের আগমন ঘটবে।

সূর্যমুখী চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আগামী দিনে উন্নত জাতের সূর্যমুখী চাষাবাদের পরিকল্পনার কথা জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, চলতি বছর ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়া কারণে ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ৯৭ মেট্রিক টন তৈল উৎপাদন করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সূর্যমুখীর ফুলের হাসিতে কৃষকের আনন্দ, সৌন্দর্য পিয়াসীদের ভিড়

আপডেট সময় : ০৬:৩২:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সূর্যমুখী ফুলের হাসিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষকের মুখে মুখে এখন হাসির ঝলক। গত ১০ বছর ধরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

এ বছর জেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়া কারণে ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ৯৭ মেট্রিক টন তেল উৎপাদন করা হবে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল শহরসহ আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসীরা দল বেধে আসেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। অনেকেই বাগানে ঢুকে শখ করে ছবি তুলেন। দেখা যায়, কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত কেউবা পরিবারের ছবি তুলতে ব্যস্ত, আবার কেউ ঘুরে ঘুরে বাগান দেখছেন। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

এদিকে কৃষকরা বলছেন অল্প পুঁজিতে সূর্যমুখী চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে আগামী দিনে ভালো ফলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের খেওয়াই গ্রাম, রামরাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রাম, ও পৌর এলাকার ভাদুঘর, নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর ঘুরে দেখা গেছে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। চাষিরা জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন গ্রামের জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ, হলুদের সমাহার। প্রতিটি বাগানেই মৌমাছির দল গুনগুন শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মৌমাছিরা সূর্যমুখী ফুল থেকে মধু নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। গ্রামে সূর্যের মতো হাসি দেওয়া হলুদ আভা ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন বাগানে আসছেন ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

রসূলপুর সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা জেলা শহরের কাজীপাড়ার রফিক বলেন, এখানে আসার পর দেখলাম জায়গাটি খুব সুন্দর। সূর্যমুখী বাগানে প্রথমবারের মতো আসলাম পরিবার নিয়ে। আমরা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারছি। সূর্যমুখী ফুল দেখেও খুব ভালো লাগল।

তমা নামে আরেকজন বলেন, ফুল দেখে খুব ভালো লেগেছে। এখানে ঘুরতে আসলে মানুষ নিরাস হবে না। এই ফুল থেকে আবার তেলও তৈরি হয়। এই তেল খুব দামি। একই সঙ্গে তেল ও ফুল দুইটাই খুব ভালো। মানুষের উচিত বেশি বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করা।

ভাদুঘর সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা মহিনী বেগম জানান, বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছি। ফেসবুকে অনেকেই দেখি সূর্যমুখী বাগানে ঘোরার ছবি দিচ্ছে। সেই লোভেই বাগানে ঘুরতে আসা। এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে। এই প্রথম সূর্যমুখী বাগান দেখলাম।

রসূলপুর বাগান মালিক জয়নাল আবেদিন জানান, এখানে ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। তিন বিঘা জমি চাষে আমাদের প্রয় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যে ফুল এখন গাছে আছে তা দিয়ে আশা করছি লাভবান হতে পারব।

পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের চাষি শাহানুর ভূইয়া জানান, আগে তিনি তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতেন। গত কয়েক বছর ধরে সদর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি তার জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছিলেন। বেশ ভালোই ব্যবসা হয়েছে। তাই এই বছর ও সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছি।

তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশাকরি এবারও সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানা বেগম বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ করা হয়। সদর উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে ৩০ জন কৃষক প্রমোদনার আওতায় এই সূর্যমুখী চাষাবাদ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন জানান, সূর্যমুখী চাষ জমির উর্বরতার জন্য ভালো। এতে পোকামাকড় আক্রমণ করে কম। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাষাবাদ হলে পর্যটকদের আগমন ঘটবে।

সূর্যমুখী চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আগামী দিনে উন্নত জাতের সূর্যমুখী চাষাবাদের পরিকল্পনার কথা জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, চলতি বছর ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়া কারণে ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ৯৭ মেট্রিক টন তৈল উৎপাদন করা হবে।