ঢাকা ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

এক কেজি ওজনের ‘লাউ বেগুন’ চাষে সফল নওগাঁর রফিকুল-বৃষ্টি দম্পতি

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫ ৪২ বার পড়া হয়েছে

এক কেজি ওজনের ‘লাউ বেগুন’ চাষে সফল নওগাঁর রফিকুল-বৃষ্টি দম্পতি

চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বরেন্দ্র জেলার সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ও বৃষ্টি দম্পতি নতুন জাতের ‘লাউ বেগুন’ চাষ করে জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ। কিন্তু কাছে গেলে ভুল ভাঙবে। মাঝারি আকারের লাউয়ের মতো সবজিটি অতি পরিচিত বেগুন। জাতের নাম বারি-১২।

নওগাঁ কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলায় প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে বারি-১২ জাতের ‘লাউ বেগুন’। এই বেগুনের এক একটির ওজন এক থেকে দেড় কেজি। প্রতিটি গাছে অন্তত ৭ থেকে ৮ কেজি বেগুন ধরেছে। অন্য জাতের বেগুনের চেয়ে এ বেগুনের ফলন ও গুনগত মান ভালো হওয়ায় বাজারে দামও বেশি। এ বেগুনের রোগ-বালাই কম। সেচও দিতে হয় কম। এর ভর্তা যেমন সুস্বাদু, তেমনি ভাজিসহ ও অন্যান্য তরকারিতে স্বাদও অতুলনীয়। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এর চারা লাগানো হয় এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে এর ফলন পাওয়া যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাসসকে বলেন, ‘এই বেগুনে রয়েছে হরেক রকমের পুষ্টিগুন। ভিটামিন ও আয়রন। এটি শক্তিশালী একটি এন্টিঅক্সিডেন্টও বটে। প্রচুর পরিমান আয়রন থাকায় এটি রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘এ’ থাকায় চোখের পুষ্টি জোগায় এবং চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই বেগুনে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। যা দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী। নতুন এ জাতের বেগুন প্রচলিত অন্যান্য বেগুনের চেয়ে ওজন বেশি হয়। তাই একে কেউ ‘কেজি বেগুন’ আবার কেউবা ‘লাউ বেগুন’ বলে থাকে। এই বেগুন উচ্চ ফলনশীল অর্থকরী ফসল এবং ব্যাক্টেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ সহনশীল।’

নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল হামিদের পুত্র রকিফুল ইসলাম (৩৫)। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আর পড়ালেখা করতে পারেন নি। অল্প বয়সেই পারিবারিক প্রয়োজনে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন। এরপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ শুরু করলেও সফল হতে পারেন নি। উপায় না দেখে তিনি ও তার স্ত্রী বৃষ্টি বানু বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমী’র সদস্য হোন। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)- এর সহায়তায় ২০২৪ সালে মৌসুমী থেকে ‘বারি-১২’ জাতের বেগুন চাষের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে মৌসুমী থেকে তাদের ৬০০টি বেগুনের চারা দেয়া হয়। রফিকুল-বৃষ্টি দম্পতি তাদের নিজস্ব ১৫ শতক জমিতে এই ৬০০ টি লাউ বেগুনের চারা রোপন করেন। এখন সেসব গাছে প্রচুর বেগুন ধরেছে।

রকিফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, গত সপ্তাহে নওগাঁ হাটে দেড় মন বেগুন নিয়ে গিয়েছিলাম। হাটে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই জানতে চাইছে, ‘এটি লাউ না বেগুন?’ অন্য বেগুন যেখানে ৫০০ টাকা মন আর সেখানে আমি ১৬০০ টাকা মন দরে বিক্রি করেছি। নিমিষেই শেষ। অন্য বেগুন থেকে এই বেগুনের লাভ ৪ গুন। তিনি জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এই বেগুন দেখতে লোকজন আসছে।

রফিকুলের স্ত্রী বৃষ্টি বানু (২২) বাসসকে বলেন, ‘মৌসুমি অফিস থেকে ১৫ শতক জমির জন্য নতুন জাতের লাউ বেগুনের ৬০০টি চারা দিয়েছিল। সেই চারা গাছ বড় হয়ে এখন  বেগুন দিচ্ছে। প্রতিটি বেগুনের ওজন এক থেকে দেড় কেজি। বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি। এ জন্য মৌসুমিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

সরেজমিনে রফিকুলের বেগুন ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আশেপাশের গ্রাম থেকে বেগুন ক্ষেত দেখতে লোকজন ভিড় করছেন।  বেগুন ক্ষেত দেখতে আসা রুহুল আমিন ও কেরামতউল্লাহ বলেন, এতো বড় বেগুন কোনোদিন দেখিনি। বিশ্বাস করা কঠিন যে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের একটি বেগুন হয়। আমরাও আগামী বছর এই বেগুনের চাষ করবো।

মৌসুমির কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, পিকেএসএফ এর আর্থিক সহায়তায় মৌসুমি থেকে রফিকুল দম্পতিকে এসব লাউ বেগুনের চারা দেয়া হয়েছে। তারা সফল হয়েছে। তাদের উৎপাদন ও বেশ ভালো হয়েছে। যা জেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন জাতের এই বেগুন প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৭ টন হয়। বীজ প্রাপ্তি সহজীকরণ ও উৎপাদন কলাকৌশল, এ জাতের বেগুনের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে পারলে এ জাতের বেগুন দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

এক কেজি ওজনের ‘লাউ বেগুন’ চাষে সফল নওগাঁর রফিকুল-বৃষ্টি দম্পতি

আপডেট সময় : ০৫:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

বরেন্দ্র জেলার সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ও বৃষ্টি দম্পতি নতুন জাতের ‘লাউ বেগুন’ চাষ করে জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ। কিন্তু কাছে গেলে ভুল ভাঙবে। মাঝারি আকারের লাউয়ের মতো সবজিটি অতি পরিচিত বেগুন। জাতের নাম বারি-১২।

নওগাঁ কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলায় প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে বারি-১২ জাতের ‘লাউ বেগুন’। এই বেগুনের এক একটির ওজন এক থেকে দেড় কেজি। প্রতিটি গাছে অন্তত ৭ থেকে ৮ কেজি বেগুন ধরেছে। অন্য জাতের বেগুনের চেয়ে এ বেগুনের ফলন ও গুনগত মান ভালো হওয়ায় বাজারে দামও বেশি। এ বেগুনের রোগ-বালাই কম। সেচও দিতে হয় কম। এর ভর্তা যেমন সুস্বাদু, তেমনি ভাজিসহ ও অন্যান্য তরকারিতে স্বাদও অতুলনীয়। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এর চারা লাগানো হয় এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে এর ফলন পাওয়া যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাসসকে বলেন, ‘এই বেগুনে রয়েছে হরেক রকমের পুষ্টিগুন। ভিটামিন ও আয়রন। এটি শক্তিশালী একটি এন্টিঅক্সিডেন্টও বটে। প্রচুর পরিমান আয়রন থাকায় এটি রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘এ’ থাকায় চোখের পুষ্টি জোগায় এবং চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই বেগুনে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। যা দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী। নতুন এ জাতের বেগুন প্রচলিত অন্যান্য বেগুনের চেয়ে ওজন বেশি হয়। তাই একে কেউ ‘কেজি বেগুন’ আবার কেউবা ‘লাউ বেগুন’ বলে থাকে। এই বেগুন উচ্চ ফলনশীল অর্থকরী ফসল এবং ব্যাক্টেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ সহনশীল।’

নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল হামিদের পুত্র রকিফুল ইসলাম (৩৫)। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আর পড়ালেখা করতে পারেন নি। অল্প বয়সেই পারিবারিক প্রয়োজনে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন। এরপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ শুরু করলেও সফল হতে পারেন নি। উপায় না দেখে তিনি ও তার স্ত্রী বৃষ্টি বানু বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমী’র সদস্য হোন। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)- এর সহায়তায় ২০২৪ সালে মৌসুমী থেকে ‘বারি-১২’ জাতের বেগুন চাষের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে মৌসুমী থেকে তাদের ৬০০টি বেগুনের চারা দেয়া হয়। রফিকুল-বৃষ্টি দম্পতি তাদের নিজস্ব ১৫ শতক জমিতে এই ৬০০ টি লাউ বেগুনের চারা রোপন করেন। এখন সেসব গাছে প্রচুর বেগুন ধরেছে।

রকিফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, গত সপ্তাহে নওগাঁ হাটে দেড় মন বেগুন নিয়ে গিয়েছিলাম। হাটে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই জানতে চাইছে, ‘এটি লাউ না বেগুন?’ অন্য বেগুন যেখানে ৫০০ টাকা মন আর সেখানে আমি ১৬০০ টাকা মন দরে বিক্রি করেছি। নিমিষেই শেষ। অন্য বেগুন থেকে এই বেগুনের লাভ ৪ গুন। তিনি জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এই বেগুন দেখতে লোকজন আসছে।

রফিকুলের স্ত্রী বৃষ্টি বানু (২২) বাসসকে বলেন, ‘মৌসুমি অফিস থেকে ১৫ শতক জমির জন্য নতুন জাতের লাউ বেগুনের ৬০০টি চারা দিয়েছিল। সেই চারা গাছ বড় হয়ে এখন  বেগুন দিচ্ছে। প্রতিটি বেগুনের ওজন এক থেকে দেড় কেজি। বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি। এ জন্য মৌসুমিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

সরেজমিনে রফিকুলের বেগুন ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আশেপাশের গ্রাম থেকে বেগুন ক্ষেত দেখতে লোকজন ভিড় করছেন।  বেগুন ক্ষেত দেখতে আসা রুহুল আমিন ও কেরামতউল্লাহ বলেন, এতো বড় বেগুন কোনোদিন দেখিনি। বিশ্বাস করা কঠিন যে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের একটি বেগুন হয়। আমরাও আগামী বছর এই বেগুনের চাষ করবো।

মৌসুমির কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, পিকেএসএফ এর আর্থিক সহায়তায় মৌসুমি থেকে রফিকুল দম্পতিকে এসব লাউ বেগুনের চারা দেয়া হয়েছে। তারা সফল হয়েছে। তাদের উৎপাদন ও বেশ ভালো হয়েছে। যা জেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন জাতের এই বেগুন প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৭ টন হয়। বীজ প্রাপ্তি সহজীকরণ ও উৎপাদন কলাকৌশল, এ জাতের বেগুনের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে পারলে এ জাতের বেগুন দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন।