ঢাকা ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

ময়মনসিংহে সুপেয় পানির তীব্র সংকট

ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি,পরিবর্তন টিভি
  • আপডেট সময় : ০৬:৩১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৫০ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ভারত সীমান্তঘেঁষা দুটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এখানকার মানুষের জীবনধারণের ভরসা পাহাড়ি ছড়া ও পুকুরের পানি। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শুকনো মৌসুমে পাহাড়ি ছড়ার বালুর গর্ত থেকে পানি তুলে এখানকার মানুষের জীবন রক্ষা হচ্ছে। এই পানি দিয়ে সব কিছু সারতে হচ্ছে।

ধোবাউড়া এলাকার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষের এমন আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। সরকারিভাবে সুপেয় পানির সুব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয়রা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। ভারতের মেঘালয় সীমানাঘেঁষা এই ইউনিয়নের সবকটি গ্রামে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষের সংখ্যাই বেশি। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলে নলকূপের পাইপ মাটির গভীরে নেওয়া সম্ভব হয় না।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন হচ্ছে ধোবাউড়া উপজেলার মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা। এই এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নলকূপের পাইপ মাটির গভীরে পানির স্তর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। ৫০-৬০ মিটার গভীরে গেলেই পাইপ আটকে যায় পাথরে। তাই গভীর নলকূপ বসানো কষ্টসাধ্য। যারা নিজ উদ্যোগে অগভীর নলকূপ বসিয়েছেন, তাদের নলকূপেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ছড়ার ময়লা পানি ও পুকুরের ঘোলা পানি দিয়ে গৃহস্থালির কাজ সারতে হয় তাদের।

উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া এলাকার গিলাগড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করছেন রুপা আক্তার নামে এক নারী। তিনি বলেন, আমরা দরিদ্র। গভীর নলকূপ দেওয়ার মতো টাকা নেই। বৃষ্টির পানি আর মাটির গর্তের পানি ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এভাবেই আমাদের জীবন চলছে।

জানা গেছে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলগড়া, কাশিপুর, বাকপাড়া, শানখলা, পঞ্চনন্ধপুরসহ কয়েকটি গ্রাম ও ঘোষগাঁও গোলইভাংগা, চন্দকোনা এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয় না। এসব এলাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শুকনো মৌসুমে পুকুর বা পাহাড়ি ছড়ার পানি খেতে হয়।

ঘোষগাঁও গ্রামের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা মুঞ্জুরুল হক বলেন, আমরা শুকনো মৌসুমে হিসাব করে পানি পান করি। টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। পুকুর আর ছড়াই আমাদের ভরসা। এতে অনেক কষ্ট হয়। তীব্র তাপপ্রবাহে আমাদের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। বৃষ্টি এলে মরিচা ধরা টিনের চাল বেয়ে যে পানি পড়ে তা সংগ্রহ করে জীবন চলে।

দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, গিলগড়া কিছু এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না পাথরের কারণে। চেয়ারম্যান হওয়ার তিন বছরে সীমান্ত এলাকায় ১০টি গভীর নলকূপ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এখন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমি চেষ্টা করছি ওই এলাকায় নলককূপ বসানোর জন্য।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী শফিউল আজম বলেন, সীমান্ত এলাকায় দুটি নলকূপ দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় কিছু এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। এবার নতুন প্রকল্প সব প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের কারণে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ময়মনসিংহে সুপেয় পানির তীব্র সংকট

আপডেট সময় : ০৬:৩১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ভারত সীমান্তঘেঁষা দুটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এখানকার মানুষের জীবনধারণের ভরসা পাহাড়ি ছড়া ও পুকুরের পানি। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শুকনো মৌসুমে পাহাড়ি ছড়ার বালুর গর্ত থেকে পানি তুলে এখানকার মানুষের জীবন রক্ষা হচ্ছে। এই পানি দিয়ে সব কিছু সারতে হচ্ছে।

ধোবাউড়া এলাকার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষের এমন আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। সরকারিভাবে সুপেয় পানির সুব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয়রা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। ভারতের মেঘালয় সীমানাঘেঁষা এই ইউনিয়নের সবকটি গ্রামে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষের সংখ্যাই বেশি। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলে নলকূপের পাইপ মাটির গভীরে নেওয়া সম্ভব হয় না।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন হচ্ছে ধোবাউড়া উপজেলার মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা। এই এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নলকূপের পাইপ মাটির গভীরে পানির স্তর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। ৫০-৬০ মিটার গভীরে গেলেই পাইপ আটকে যায় পাথরে। তাই গভীর নলকূপ বসানো কষ্টসাধ্য। যারা নিজ উদ্যোগে অগভীর নলকূপ বসিয়েছেন, তাদের নলকূপেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ছড়ার ময়লা পানি ও পুকুরের ঘোলা পানি দিয়ে গৃহস্থালির কাজ সারতে হয় তাদের।

উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া এলাকার গিলাগড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করছেন রুপা আক্তার নামে এক নারী। তিনি বলেন, আমরা দরিদ্র। গভীর নলকূপ দেওয়ার মতো টাকা নেই। বৃষ্টির পানি আর মাটির গর্তের পানি ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এভাবেই আমাদের জীবন চলছে।

জানা গেছে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলগড়া, কাশিপুর, বাকপাড়া, শানখলা, পঞ্চনন্ধপুরসহ কয়েকটি গ্রাম ও ঘোষগাঁও গোলইভাংগা, চন্দকোনা এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয় না। এসব এলাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শুকনো মৌসুমে পুকুর বা পাহাড়ি ছড়ার পানি খেতে হয়।

ঘোষগাঁও গ্রামের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা মুঞ্জুরুল হক বলেন, আমরা শুকনো মৌসুমে হিসাব করে পানি পান করি। টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। পুকুর আর ছড়াই আমাদের ভরসা। এতে অনেক কষ্ট হয়। তীব্র তাপপ্রবাহে আমাদের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। বৃষ্টি এলে মরিচা ধরা টিনের চাল বেয়ে যে পানি পড়ে তা সংগ্রহ করে জীবন চলে।

দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, গিলগড়া কিছু এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না পাথরের কারণে। চেয়ারম্যান হওয়ার তিন বছরে সীমান্ত এলাকায় ১০টি গভীর নলকূপ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এখন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমি চেষ্টা করছি ওই এলাকায় নলককূপ বসানোর জন্য।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী শফিউল আজম বলেন, সীমান্ত এলাকায় দুটি নলকূপ দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় কিছু এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। এবার নতুন প্রকল্প সব প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের কারণে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।