ঢাকা ০১:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

স্মার্টফোনে সমৃদ্ধি? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আয়ের ঝোঁকে তরুণ সমাজ

চলনবিলের সময়
  • আপডেট সময় : ১০:৫৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আজকাল একটি স্পষ্ট প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে—বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে। অনেকেই মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম ইত্যাদিকে আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। শিক্ষাজীবন বা পেশাগত প্রস্তুতির চেয়ে তারা এখন ‘ভিউ’, ‘সাবস্ক্রাইব’ ও ‘ফলোয়ার’-এ বেশি মনোযোগী। এই প্রবণতা সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কতটা ইতিবাচক, আর কতটা আত্মপ্রবঞ্চনার পথ, সেটাই এখন আলোচনার বিষয়।

কেন এই ঝোঁক?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে আয়ের ধারণাটি নতুন নয়। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম, ফেসবুক মনিটাইজেশন, ইনস্টাগ্রামের ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ এবং টিকটকের বিজ্ঞাপনমূলক চুক্তি—সব মিলিয়ে এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে উপার্জন করা এখন বাস্তবতা। তদুপরি, একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে রাতারাতি তারকা হওয়ার সম্ভাবনা, ঘরে বসেই কাজের সুবিধা এবং প্রচলিত চাকরির তুলনায় স্বাধীনতা—এসবই তরুণদের এই দিকটায় আকৃষ্ট করছে।

সহজলভ্যতা ও বিভ্রম

একটি স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই শুরু করা যায় কনটেন্ট তৈরি। শিক্ষাগত যোগ্যতা, কারিগরি দক্ষতা বা পুঁজি—এই সব বাধা এখানে নেই বললেই চলে। ফলে কেউ কেউ এটা ভাবতে শুরু করেছেন, শিক্ষাজীবনের প্রয়োজনই নেই; বরং ইউটিউব বা টিকটকে ভিডিও দিলেই অর্থ আসবে।

এটি এক ধরনের বিভ্রম। বাস্তবতা হচ্ছে—এই মাধ্যমে সফলতা খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ইউটিউবে ৯৫% কনটেন্ট নির্মাতা মাসে ১০ ডলারের নিচে আয় করেন। ফেসবুকে মনিটাইজেশন শর্ত কঠোর। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে আয় করতে হলে ব্র্যান্ড স্পন্সর দরকার, যা সহজে আসে না।

এটি কি নির্ভরযোগ্য?

দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ভিত্তিক উপার্জনকে একমাত্র নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস বলা যায় না। কারণ:

নীতিমালার পরিবর্তন: প্ল্যাটফর্মগুলোর নিয়ম যেকোনো সময় বদলে যায়। মনিটাইজেশন বন্ধ হলে আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নকল কনটেন্ট, কম মান: অনেকেই দ্রুত জনপ্রিয়তার আশায় কপি করা বা অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট তৈরি করেন। এতে একসময় দর্শক হারিয়ে যায়।

মানসিক চাপ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: সবসময় নতুন কনটেন্ট দিতে গিয়ে অনেকেই মানসিক চাপ বা অবসাদে ভোগেন।

পরিকল্পনার অভাব: আর্থিক বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনা না থাকায় বেশিরভাগ মানুষ একসময় হতাশ হয়ে পড়েন।

সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি

তবে একে একেবারে বাতিল করে দেওয়ার কিছু নেই। যারা পরিকল্পিতভাবে কাজ করছেন, নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করছেন, ব্র্যান্ডিং বুঝছেন এবং বিকল্প আয় উৎস রাখছেন—তাদের জন্য এটি হতে পারে একটি শক্তিশালী পেশা।

সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে তরুণদের ডিজিটাল কনটেন্ট ও মিডিয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া, নৈতিকতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও গুরুত্বপূর্ণ।

অবশেষে বলা যায় যে,সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক আয়ের প্রবণতা একটি বাস্তবতা। তবে এটিকে একমাত্র আয়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা আত্মপ্রবঞ্চনার সামিল হতে পারে। তাই তরুণ সমাজের উচিত এটিকে সহায়ক মাধ্যম হিসেবে দেখার পাশাপাশি শিক্ষালাভ, দক্ষতা উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় মনোযোগ দেওয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

স্মার্টফোনে সমৃদ্ধি? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আয়ের ঝোঁকে তরুণ সমাজ

আপডেট সময় : ১০:৫৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

আজকাল একটি স্পষ্ট প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে—বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে। অনেকেই মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম ইত্যাদিকে আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। শিক্ষাজীবন বা পেশাগত প্রস্তুতির চেয়ে তারা এখন ‘ভিউ’, ‘সাবস্ক্রাইব’ ও ‘ফলোয়ার’-এ বেশি মনোযোগী। এই প্রবণতা সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কতটা ইতিবাচক, আর কতটা আত্মপ্রবঞ্চনার পথ, সেটাই এখন আলোচনার বিষয়।

কেন এই ঝোঁক?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে আয়ের ধারণাটি নতুন নয়। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম, ফেসবুক মনিটাইজেশন, ইনস্টাগ্রামের ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ এবং টিকটকের বিজ্ঞাপনমূলক চুক্তি—সব মিলিয়ে এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে উপার্জন করা এখন বাস্তবতা। তদুপরি, একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে রাতারাতি তারকা হওয়ার সম্ভাবনা, ঘরে বসেই কাজের সুবিধা এবং প্রচলিত চাকরির তুলনায় স্বাধীনতা—এসবই তরুণদের এই দিকটায় আকৃষ্ট করছে।

সহজলভ্যতা ও বিভ্রম

একটি স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই শুরু করা যায় কনটেন্ট তৈরি। শিক্ষাগত যোগ্যতা, কারিগরি দক্ষতা বা পুঁজি—এই সব বাধা এখানে নেই বললেই চলে। ফলে কেউ কেউ এটা ভাবতে শুরু করেছেন, শিক্ষাজীবনের প্রয়োজনই নেই; বরং ইউটিউব বা টিকটকে ভিডিও দিলেই অর্থ আসবে।

এটি এক ধরনের বিভ্রম। বাস্তবতা হচ্ছে—এই মাধ্যমে সফলতা খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ইউটিউবে ৯৫% কনটেন্ট নির্মাতা মাসে ১০ ডলারের নিচে আয় করেন। ফেসবুকে মনিটাইজেশন শর্ত কঠোর। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে আয় করতে হলে ব্র্যান্ড স্পন্সর দরকার, যা সহজে আসে না।

এটি কি নির্ভরযোগ্য?

দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ভিত্তিক উপার্জনকে একমাত্র নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস বলা যায় না। কারণ:

নীতিমালার পরিবর্তন: প্ল্যাটফর্মগুলোর নিয়ম যেকোনো সময় বদলে যায়। মনিটাইজেশন বন্ধ হলে আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নকল কনটেন্ট, কম মান: অনেকেই দ্রুত জনপ্রিয়তার আশায় কপি করা বা অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট তৈরি করেন। এতে একসময় দর্শক হারিয়ে যায়।

মানসিক চাপ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: সবসময় নতুন কনটেন্ট দিতে গিয়ে অনেকেই মানসিক চাপ বা অবসাদে ভোগেন।

পরিকল্পনার অভাব: আর্থিক বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনা না থাকায় বেশিরভাগ মানুষ একসময় হতাশ হয়ে পড়েন।

সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি

তবে একে একেবারে বাতিল করে দেওয়ার কিছু নেই। যারা পরিকল্পিতভাবে কাজ করছেন, নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করছেন, ব্র্যান্ডিং বুঝছেন এবং বিকল্প আয় উৎস রাখছেন—তাদের জন্য এটি হতে পারে একটি শক্তিশালী পেশা।

সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে তরুণদের ডিজিটাল কনটেন্ট ও মিডিয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া, নৈতিকতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও গুরুত্বপূর্ণ।

অবশেষে বলা যায় যে,সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক আয়ের প্রবণতা একটি বাস্তবতা। তবে এটিকে একমাত্র আয়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা আত্মপ্রবঞ্চনার সামিল হতে পারে। তাই তরুণ সমাজের উচিত এটিকে সহায়ক মাধ্যম হিসেবে দেখার পাশাপাশি শিক্ষালাভ, দক্ষতা উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় মনোযোগ দেওয়া।