ঢাকা ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

রাস্তার কাজে অনিয়ম, প্রশ্ন করায় সাংবাদিককে হুমকি

আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৭:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রকল্প, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) এবং কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা বলছে, অধিকাংশ এলাকায় এসব প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান নয় এবং যেখানে আবার কাজ শুরু হয়েছে, সেখানেও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উপজেলার ধামোর ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের বর্তমানে ৪টি কার্যক্রমের বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো- গিরাগাঁও গ্রামে ৪ লাখ টাকার ৬৬০ ফিটের ইটের সলিং, মালগোবা গ্রামে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকার ৩০০ ফিটের সিসি ঢালাই, রাজাগাঁও গ্রামের নজরুলের বাড়ি থেকে নাগর নদী পর্যন্ত ৪ লাখ টাকার রাস্তা সংস্কার এবং জুগিকাটা গ্রাম থেকে মিশন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার রাস্তা সংস্কারের কাজ।

প্রকল্পগুলোর সভাপতি ধামোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি আবু তাহের মো. দুলাল। এ ছাড়াও ওই ইউনিয়নের প্রত্যেকটি কাজের সরদার হলো উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলামের সহযোগী এনামুল হক। তিনি বর্তমানে বহাল তবিয়তে বেশ কয়েকটি কাবিখা এবং কাবিটা প্রকল্পের কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) মালগোবা গ্রামে সিসি ঢালাইয়ের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কাজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কাজের প্রথম দিকে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। পরে স্থানীয়দের তোপের মুখে নতুন ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রাস্তায় মোট ৫ ইঞ্চি ঢালাইয়ের কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর-দক্ষিণের ওই রাস্তার পশ্চিম দিকটা কিছুটা উঁচু এবং পূর্ব দিকটা কিছুটা নিচু।

তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কার্য সহকারী শাহিরুল ইসলামের উপস্থিতিতে ৫ ইঞ্চি ঢালাই হচ্ছে কি-না তা দেখতে গেলে দেখা যায়, রাস্তার পশ্চিম সাইডে সাড়ে ৩ ইঞ্চি থেকে পৌনে ৪ ইঞ্চি এবং পূর্ব সাইডে সাড়ে ৩ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, কাজ একেবারেই ভালো হচ্ছে না। ৫ ইঞ্চির জায়গায় প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি ঢালাই করা হচ্ছে। কাজের শুরুতে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে এলাকার লোকজন সেটা ধরলে ইটের খোয়া পরিবর্তন করে দেয়।

এ বিষয়ে ওই প্রকল্পের সভাপতি ও ধামোর ইউপির চেয়ারম্যান আবু তাহের মো. দুলাল বলেন, ওখানে তো অফিসের লোক রয়েছে। কাজ ভালো হওয়ার কথা। ৫ ইঞ্চি ঢালাইয়ের কম হলে অফিসের লোক বিষয়টি অবশ্যই দেখবে। তবে আমি ওখানে কথা বলছি যেন ৫ ইঞ্চির কম ঢালাই না হয়।

ওই প্রকল্পের সরদার এনামুল হক জানান, এসব কাজের মধ্যে একটু-আধটু কম-বেশি হতেই পারে। যেখানে বড় বড় কাজ হয়, কোটি কোটি টাকার কাজ হয় সেখানে কেন সাংবাদিকদের চোখ যায় না।

পরে ওই কাজের ভুলত্রুটি ধরতে যাওয়ায় প্রতিবেদককে অনেক হুমকি-ধামকি দেন সরদার এনামুল। তিনি প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, কেন কাজ দেখতে যাওয়া হয়েছে আর কেন পিআইওকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

তিনি হুমকি দিয়ে আরও বলেন, আজ পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে লিখতে পারেনি। সব সাংবাদিক টাকার জন্য কাজ করে। ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা চাইতে পার কিন্তু নিউজ কেন করবা।

এ বিষয়ে আটোয়ারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত ছিলাম না, আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারলাম। রোববার অফিস খোলার পরে আমি বিষয়টি দেখব। তবে, সবকিছু না জেনে এই মুহূর্তে আর কোনো মন্তব্য প্রকাশ করতে চাননি তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

রাস্তার কাজে অনিয়ম, প্রশ্ন করায় সাংবাদিককে হুমকি

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রকল্প, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) এবং কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা বলছে, অধিকাংশ এলাকায় এসব প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান নয় এবং যেখানে আবার কাজ শুরু হয়েছে, সেখানেও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উপজেলার ধামোর ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের বর্তমানে ৪টি কার্যক্রমের বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো- গিরাগাঁও গ্রামে ৪ লাখ টাকার ৬৬০ ফিটের ইটের সলিং, মালগোবা গ্রামে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকার ৩০০ ফিটের সিসি ঢালাই, রাজাগাঁও গ্রামের নজরুলের বাড়ি থেকে নাগর নদী পর্যন্ত ৪ লাখ টাকার রাস্তা সংস্কার এবং জুগিকাটা গ্রাম থেকে মিশন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার রাস্তা সংস্কারের কাজ।

প্রকল্পগুলোর সভাপতি ধামোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি আবু তাহের মো. দুলাল। এ ছাড়াও ওই ইউনিয়নের প্রত্যেকটি কাজের সরদার হলো উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলামের সহযোগী এনামুল হক। তিনি বর্তমানে বহাল তবিয়তে বেশ কয়েকটি কাবিখা এবং কাবিটা প্রকল্পের কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) মালগোবা গ্রামে সিসি ঢালাইয়ের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কাজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কাজের প্রথম দিকে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। পরে স্থানীয়দের তোপের মুখে নতুন ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রাস্তায় মোট ৫ ইঞ্চি ঢালাইয়ের কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর-দক্ষিণের ওই রাস্তার পশ্চিম দিকটা কিছুটা উঁচু এবং পূর্ব দিকটা কিছুটা নিচু।

তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কার্য সহকারী শাহিরুল ইসলামের উপস্থিতিতে ৫ ইঞ্চি ঢালাই হচ্ছে কি-না তা দেখতে গেলে দেখা যায়, রাস্তার পশ্চিম সাইডে সাড়ে ৩ ইঞ্চি থেকে পৌনে ৪ ইঞ্চি এবং পূর্ব সাইডে সাড়ে ৩ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, কাজ একেবারেই ভালো হচ্ছে না। ৫ ইঞ্চির জায়গায় প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি ঢালাই করা হচ্ছে। কাজের শুরুতে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে এলাকার লোকজন সেটা ধরলে ইটের খোয়া পরিবর্তন করে দেয়।

এ বিষয়ে ওই প্রকল্পের সভাপতি ও ধামোর ইউপির চেয়ারম্যান আবু তাহের মো. দুলাল বলেন, ওখানে তো অফিসের লোক রয়েছে। কাজ ভালো হওয়ার কথা। ৫ ইঞ্চি ঢালাইয়ের কম হলে অফিসের লোক বিষয়টি অবশ্যই দেখবে। তবে আমি ওখানে কথা বলছি যেন ৫ ইঞ্চির কম ঢালাই না হয়।

ওই প্রকল্পের সরদার এনামুল হক জানান, এসব কাজের মধ্যে একটু-আধটু কম-বেশি হতেই পারে। যেখানে বড় বড় কাজ হয়, কোটি কোটি টাকার কাজ হয় সেখানে কেন সাংবাদিকদের চোখ যায় না।

পরে ওই কাজের ভুলত্রুটি ধরতে যাওয়ায় প্রতিবেদককে অনেক হুমকি-ধামকি দেন সরদার এনামুল। তিনি প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, কেন কাজ দেখতে যাওয়া হয়েছে আর কেন পিআইওকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

তিনি হুমকি দিয়ে আরও বলেন, আজ পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে লিখতে পারেনি। সব সাংবাদিক টাকার জন্য কাজ করে। ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা চাইতে পার কিন্তু নিউজ কেন করবা।

এ বিষয়ে আটোয়ারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত ছিলাম না, আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারলাম। রোববার অফিস খোলার পরে আমি বিষয়টি দেখব। তবে, সবকিছু না জেনে এই মুহূর্তে আর কোনো মন্তব্য প্রকাশ করতে চাননি তিনি।