ঢাকা ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

করোনার ‘ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা’, প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে মামলা

চলনবিলের সময় নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৮:৩০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ ১০ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

করোনার ভুল রিপোর্ট দিয়ে বাণিজ্যের ফাঁদের অভিযোগে ঢাকার নামকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সিমিন এম আক্তার, পরিচালক ডা. জাহিদ হোসেন এবং প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা রেজোয়ান আল রিমনকে অভিযুক্ত করে আসামি করা হয়েছে। চার বছর আগে তাদের প্রতারণার শিকার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার মামলাটি দায়ের করেন। সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ইব্রাহিম খলিল অভিযুক্তদের আদালতে হাজিরের জন্য সমন জারির আদেশ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ৬ মার্চ আব্দুস সাত্তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৯ মার্চ তিনি ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে এনজিওগ্রাম করার জন্য যান। সে সময় দেশজুড়ে করোনা মহামারি চলছিল। এনজিওগ্রামের আগে কভিড টেস্ট করানোর জন্য তিনি বনানীর প্রাভা হেলথ হাসপাতালে যান।

২০ মার্চ তাদের নির্ধারিত ৩ হাজার ৪৭৫ টাকা জমা দিয়ে তিনি প্রাভা হেলথের মীরপুর কালেকশন সেন্টারে কভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। পরদিন তাকে দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি করোনায় আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে ডা. জাহিদ হোসাইন ও রেজোয়ান আল রিমনের নাম ও সই ছিল।

মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই প্রতিবেদন দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত আব্দুস সাত্তার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিজের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ না দেখে সন্দেহ হলে তিনি ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে ফের নমুনা দেন। সেখানে তিনি করোনায় আক্রান্ত নন বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন এবং সুস্থ হন।

ভুক্তভোগী আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তির একদিন পর প্রাভা হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আমাকে ফোন করে জানায়, আপনার রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছে। এখন আমাদের একটা প্যাকেজ আছে এক লাখ টাকার; আপনি ভর্তি হবেন কি না। তখন আমি তাদের বললাম যে, আমার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল, আমার রিংও পরানো শেষ। কিন্তু আপনারা প্রতারণা করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছেন। আমি আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ায় প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার পরে তারা ভুল স্বীকারও করে নেয়; কিন্তু আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। পরে জানলাম তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। ডাক্তার সাবরিনার মতো ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে প্যাকেজের আওতায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করে মানুষদের ঠকিয়েছে। তারা শুধু আমাকেই এমন ঠকিয়েছে তা কিন্তু নয়। আরও অসংখ্য মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে। যেহেতু তারা এতদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় ছিল; তাই কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এ কারণে সোমবার মামলা করলাম। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, কভিড টেস্টের ভুল রিপোর্ট দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা এবং অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে এ মামলা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত তিন আসামির বিরুদ্ধেই সমন জারি করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

করোনার ‘ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা’, প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট সময় : ০৮:৩০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

করোনার ভুল রিপোর্ট দিয়ে বাণিজ্যের ফাঁদের অভিযোগে ঢাকার নামকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সিমিন এম আক্তার, পরিচালক ডা. জাহিদ হোসেন এবং প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা রেজোয়ান আল রিমনকে অভিযুক্ত করে আসামি করা হয়েছে। চার বছর আগে তাদের প্রতারণার শিকার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার মামলাটি দায়ের করেন। সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ইব্রাহিম খলিল অভিযুক্তদের আদালতে হাজিরের জন্য সমন জারির আদেশ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ৬ মার্চ আব্দুস সাত্তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৯ মার্চ তিনি ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে এনজিওগ্রাম করার জন্য যান। সে সময় দেশজুড়ে করোনা মহামারি চলছিল। এনজিওগ্রামের আগে কভিড টেস্ট করানোর জন্য তিনি বনানীর প্রাভা হেলথ হাসপাতালে যান।

২০ মার্চ তাদের নির্ধারিত ৩ হাজার ৪৭৫ টাকা জমা দিয়ে তিনি প্রাভা হেলথের মীরপুর কালেকশন সেন্টারে কভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। পরদিন তাকে দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি করোনায় আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে ডা. জাহিদ হোসাইন ও রেজোয়ান আল রিমনের নাম ও সই ছিল।

মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই প্রতিবেদন দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত আব্দুস সাত্তার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিজের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ না দেখে সন্দেহ হলে তিনি ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে ফের নমুনা দেন। সেখানে তিনি করোনায় আক্রান্ত নন বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন এবং সুস্থ হন।

ভুক্তভোগী আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তির একদিন পর প্রাভা হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আমাকে ফোন করে জানায়, আপনার রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছে। এখন আমাদের একটা প্যাকেজ আছে এক লাখ টাকার; আপনি ভর্তি হবেন কি না। তখন আমি তাদের বললাম যে, আমার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল, আমার রিংও পরানো শেষ। কিন্তু আপনারা প্রতারণা করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছেন। আমি আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ায় প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার পরে তারা ভুল স্বীকারও করে নেয়; কিন্তু আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। পরে জানলাম তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। ডাক্তার সাবরিনার মতো ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে প্যাকেজের আওতায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করে মানুষদের ঠকিয়েছে। তারা শুধু আমাকেই এমন ঠকিয়েছে তা কিন্তু নয়। আরও অসংখ্য মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে। যেহেতু তারা এতদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় ছিল; তাই কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এ কারণে সোমবার মামলা করলাম। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, কভিড টেস্টের ভুল রিপোর্ট দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা এবং অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে এ মামলা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত তিন আসামির বিরুদ্ধেই সমন জারি করেছেন।