ঢাকা ০৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মেধাভিত্তিক দেশ গঠনে শিক্ষা অপরিহার্য: ব্যারিস্টার অসীম Logo রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা Logo জুলাই যোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটা থাকছে না : মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা Logo ৮ দফা দাবিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেছেন শিক্ষার্থীরা Logo বিআরটিএ পাবনা সার্কেলের অভিযানে ১২ টি মামলা ও ২৯ হাজার টাকা জরিমানা Logo পদ্মার ভাঙনে সুজানগরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শ শ বাড়ীঘর ও ফসলী জমি Logo ৭ম জন্মদিনে স্বপ্নকে শাজাহানপুর প্রেসক্লাবের উষ্ণ অভিনন্দন! Logo টাইগারদের দাপুটে বোলিংয়ে বিধ্বস্ত পাক ব্যাটাররা, মামুলি লক্ষ্য বাংলাদেশের Logo মধ্যরাতে মদ্যপ অবস্থায় নোবেলের মারামারি, অতঃপর… Logo হাতে পবিত্র কোরআন লিখলেন ৯ বছরের শিশু
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

আষাঢ়ে রাজশাহীতে বদলে গেছে বৃষ্টির ধরন, কেন

চলনবিলের সময় নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ১০:২৩:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ ৫৭ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গতকাল বুধবার রাজশাহীতে সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই এখানে বৃষ্টি ঝরছে। অথচ গত বছর আষাঢ় মাসে মাত্র এক দিন বৃষ্টি হয়েছিল। তার আগের বছর ২০২৩ সালে বৃষ্টি হয়েছিল মাত্র তিন দিন। ২০২২ সালে চার দিন, ২০২১ সালে ছয় দিন, তার আগের বছর ২০২০ সালে বৃষ্টি হয়েছে পাঁচ দিন।

এবারের মতো আষাঢ়ে এমন বৃষ্টি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কবে হয়েছে, তা কেউ মনে করতে পারেন না। এবারের বৃষ্টির রূপ একেবারেই আলাদা। আষাঢ়ের ২৬ দিনে ২৫ মিলিমিটারের ওপর বৃষ্টি হয়েছে মাত্র দুই দিন; কিন্তু প্রতিদিনই অল্প হলেও বৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টি নিয়ে একটি লোককথা প্রচলিত আছে, ‘সারা বছরের খরা, এক দিনের ঝরা।’ সেই রকম বৃষ্টি এক দিন হলেই গ্রামের পুকুর-ডোবা, খাল-বিল সব ভরে যেত। আর কোথা থেকে যেন হলুদ রঙের ব্যাঙ বের হয়ে আসত। তারা ডোবার ধারে বসে গাল ফুলিয়ে ফুলিয়ে ডাকত। অনেক দিন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।

জেলার চারঘাট উপজেলার ভয়ালক্ষ্মীপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক হাবিবুর রহমান (৬০) বলেন, এ বছর এক দিন তিনি কয়েকটি ব্যাঙ দেখেছেন। সেদিন একটু ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। তা ছাড়া আগের মতো বৃষ্টি হলেই ব্যাঙের ডাক আর শোনা যায় না।

বাঘা উপজেলার পাঁচপাড়া উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক রফিজ উদ্দিন বলেন, এ বছর চৈত্র মাসে এক দিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেদিন কয়েকটি ব্যাঙ তিনি দেখেছেন। তা ছাড়া এই যে ভরা আষাঢ় মাস যাচ্ছে, রোজ বৃষ্টি হচ্ছে; কিন্তু পুকুর, ডোবা–নালা কিছুই ভরেনি। ব্যাঙও ডাকেনি। রাজশাহীর চারঘাটের বড়াল নদ এখনো শুকিয়ে আছে। শুধু চারঘাট স্লুইসগেটের সামনে একটু জায়গায় পানি আছে। জেলার কোনো উপজেলাতেই বড় পুকুর-ডোবা, খালে-বিলে আষাঢ়ের থইথই করা পানি নেই।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার আষাঢ়ের চতুর্থ দিন রাজশাহীতে মাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সেটি ছিল ৪৭ মিলিমিটার। এরপর আষাঢ়ের নবম দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৪০ মিলিমিটার।

রাজশাহীতে ১৩ বছর ধরে আবহাওয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক শিক্ষক, নওগাঁর শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ। তাঁর হিসাবমতে, এবার আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে; কিন্তু এক দিনও ভারী বৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, আগের দিনে লাগাতার বৃষ্টি হতো। এলাকার মুরব্বিরা বলতেন, ‘শনিতে সাত আর মঙ্গলে তিন।’ অর্থাৎ শনিবার বৃষ্টি শুরু হলে সাত দিন ধরে লেগে থাকত। আর মঙ্গলবারে শুরু হলে তিন দিন ধরে লেগে থাকত। তখন বৃষ্টিতে পুকুরের মাছ ভেসে যেত। এখন বৃষ্টির সেই চেহারা বদলে গেছে। তবে এবার আষাঢ়ের চেহারা একেবারেই ভিন্ন। মাসের প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে; কিন্তু কাজে লাগার মতো বৃষ্টি হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান বলেন, কয়েক বছর ধরে এল–নিনোর প্রভাব প্রবল ছিল। এ কারণে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত সে রকম হয়নি। এবার দেখা যাচ্ছে ঠিক বিপরীতমুখী অবস্থার তৈরি হয়েছে। এটার কারণ হচ্ছে লা–নিনার প্রভাব প্রবল হয়েছে। গত বছর এ সময়ে আবহাওয়া যত উষ্ণ ছিল, এবার ততটাই শীতল। এটা হচ্ছে লাগাতার বৃষ্টির কারণে। প্রতিদিনই একটু না একটু বৃষ্টি হচ্ছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আষাঢ়ে রাজশাহীতে বদলে গেছে বৃষ্টির ধরন, কেন

আপডেট সময় : ১০:২৩:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

গতকাল বুধবার রাজশাহীতে সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই এখানে বৃষ্টি ঝরছে। অথচ গত বছর আষাঢ় মাসে মাত্র এক দিন বৃষ্টি হয়েছিল। তার আগের বছর ২০২৩ সালে বৃষ্টি হয়েছিল মাত্র তিন দিন। ২০২২ সালে চার দিন, ২০২১ সালে ছয় দিন, তার আগের বছর ২০২০ সালে বৃষ্টি হয়েছে পাঁচ দিন।

এবারের মতো আষাঢ়ে এমন বৃষ্টি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কবে হয়েছে, তা কেউ মনে করতে পারেন না। এবারের বৃষ্টির রূপ একেবারেই আলাদা। আষাঢ়ের ২৬ দিনে ২৫ মিলিমিটারের ওপর বৃষ্টি হয়েছে মাত্র দুই দিন; কিন্তু প্রতিদিনই অল্প হলেও বৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টি নিয়ে একটি লোককথা প্রচলিত আছে, ‘সারা বছরের খরা, এক দিনের ঝরা।’ সেই রকম বৃষ্টি এক দিন হলেই গ্রামের পুকুর-ডোবা, খাল-বিল সব ভরে যেত। আর কোথা থেকে যেন হলুদ রঙের ব্যাঙ বের হয়ে আসত। তারা ডোবার ধারে বসে গাল ফুলিয়ে ফুলিয়ে ডাকত। অনেক দিন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।

জেলার চারঘাট উপজেলার ভয়ালক্ষ্মীপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক হাবিবুর রহমান (৬০) বলেন, এ বছর এক দিন তিনি কয়েকটি ব্যাঙ দেখেছেন। সেদিন একটু ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। তা ছাড়া আগের মতো বৃষ্টি হলেই ব্যাঙের ডাক আর শোনা যায় না।

বাঘা উপজেলার পাঁচপাড়া উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক রফিজ উদ্দিন বলেন, এ বছর চৈত্র মাসে এক দিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেদিন কয়েকটি ব্যাঙ তিনি দেখেছেন। তা ছাড়া এই যে ভরা আষাঢ় মাস যাচ্ছে, রোজ বৃষ্টি হচ্ছে; কিন্তু পুকুর, ডোবা–নালা কিছুই ভরেনি। ব্যাঙও ডাকেনি। রাজশাহীর চারঘাটের বড়াল নদ এখনো শুকিয়ে আছে। শুধু চারঘাট স্লুইসগেটের সামনে একটু জায়গায় পানি আছে। জেলার কোনো উপজেলাতেই বড় পুকুর-ডোবা, খালে-বিলে আষাঢ়ের থইথই করা পানি নেই।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার আষাঢ়ের চতুর্থ দিন রাজশাহীতে মাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সেটি ছিল ৪৭ মিলিমিটার। এরপর আষাঢ়ের নবম দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৪০ মিলিমিটার।

রাজশাহীতে ১৩ বছর ধরে আবহাওয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক শিক্ষক, নওগাঁর শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ। তাঁর হিসাবমতে, এবার আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে; কিন্তু এক দিনও ভারী বৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, আগের দিনে লাগাতার বৃষ্টি হতো। এলাকার মুরব্বিরা বলতেন, ‘শনিতে সাত আর মঙ্গলে তিন।’ অর্থাৎ শনিবার বৃষ্টি শুরু হলে সাত দিন ধরে লেগে থাকত। আর মঙ্গলবারে শুরু হলে তিন দিন ধরে লেগে থাকত। তখন বৃষ্টিতে পুকুরের মাছ ভেসে যেত। এখন বৃষ্টির সেই চেহারা বদলে গেছে। তবে এবার আষাঢ়ের চেহারা একেবারেই ভিন্ন। মাসের প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে; কিন্তু কাজে লাগার মতো বৃষ্টি হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান বলেন, কয়েক বছর ধরে এল–নিনোর প্রভাব প্রবল ছিল। এ কারণে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত সে রকম হয়নি। এবার দেখা যাচ্ছে ঠিক বিপরীতমুখী অবস্থার তৈরি হয়েছে। এটার কারণ হচ্ছে লা–নিনার প্রভাব প্রবল হয়েছে। গত বছর এ সময়ে আবহাওয়া যত উষ্ণ ছিল, এবার ততটাই শীতল। এটা হচ্ছে লাগাতার বৃষ্টির কারণে। প্রতিদিনই একটু না একটু বৃষ্টি হচ্ছে।