ঢাকা ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

সরকারি সহায়তা না থাকায় টিকছে না পানচাষ

উলিপুরে পানের বরজে লোকসান, পৈত্রিক পেশা ছাড়ছেন চাষিরা

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:১৭:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ ৫০ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পানের বরজে আর আগের মতো সোনা ফলছে না। বিয়ে, পূজা-পার্বণ কিংবা যে কোনো ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভাতের পরেই যার নাম আসে—সেই পানের কদর থাকলেও, পানচাষ এখন আর লাভজনক নয়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও বাজারে ন্যায্যমূল্যের অভাবে পৈত্রিক পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বরজ মালিকরা।

 

এক সময় উলিপুরের পানচাষ ছিল আয়ের অন্যতম উৎস। পানের বরজ হয়ে উঠত যেন পরিবারের ব্যাংক। চাহিদা অনুযায়ী বরজ থেকে পান তুলে বিক্রি করেই শিক্ষা, চিকিৎসা, এমনকি জমিও কেনা হতো। আজ সেই বরজ চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে চাষিরা পড়ছেন লোকসানে।

পান্ডুল ইউনিয়নের আপুয়ার খাতা হিন্দুপাড়া গ্রামের পানচাষি বিমল চন্দ্র রায় জানান, বাবা-ঠাকুরদারা বরজ দিয়েই সংসার চালাতেন। এখন বরজের এক বছরের রক্ষণাবেক্ষণে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হলেও তেমন লাভ হয় না। বিশেষ করে বর্ষাকালে লোকসান গুনতে হয়।

স্থানীয় আরেক চাষি পবিত্র চন্দ্র বলেন, আমি বাবার কাছ থেকে পানচাষ শিখেছি। একসময় এলাকার অনেকেই বরজ করত। এখন লাভ না থাকায় অনেকে ধান বা সবজি চাষে চলে গেছেন।

৩০ বছর ধরে পানচাষ করছেন যতিন চন্দ্র। তিনি বলেন, ২০ শতক জমিতে বরজ আছে। এখান থেকেই সংসার চলে। প্রতিদিন সময় দিই বরজে। কিন্তু সরকারি কোনো সহায়তা না থাকায় বরজ বাড়ানো বা আধুনিকায়নের সুযোগ পাই না।”

চাষি মনোজিৎ কুমার অভিযোগ করেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ বাস্তবসম্মত নয়। অনেক সময় তারা শুধু ফর্মালিটিই করে। বরজ মালিকদের প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ বা সরঞ্জাম সহায়তা না দিলে এই চাষ আর টিকবে না।”

উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, পান চাষিরা অনেক ইউনিয়নে এখনো ভালো ফলন পাচ্ছেন। আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে পানচাষ আরও লাভজনক হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, পান্ডুল, তবকপুর ও ধরনীবাড়ি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে ২০০টি বরজ রয়েছে। এসব বরজ এখন অস্তিত্ব সংকটে। বরজ তৈরির খুঁটি, বাঁশ, ছাউনি ও জালের দাম বেড়ে গেছে। তাতে চাষিরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না।

চাষিদের দাবি, বরজ রক্ষায় প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ, উপকরণ সহায়তা ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে সরকারি হস্তক্ষেপ চান পানচাষিরা। নইলে প্রাচীন এই চাষ হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সরকারি সহায়তা না থাকায় টিকছে না পানচাষ

উলিপুরে পানের বরজে লোকসান, পৈত্রিক পেশা ছাড়ছেন চাষিরা

আপডেট সময় : ১০:১৭:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পানের বরজে আর আগের মতো সোনা ফলছে না। বিয়ে, পূজা-পার্বণ কিংবা যে কোনো ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভাতের পরেই যার নাম আসে—সেই পানের কদর থাকলেও, পানচাষ এখন আর লাভজনক নয়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও বাজারে ন্যায্যমূল্যের অভাবে পৈত্রিক পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বরজ মালিকরা।

 

এক সময় উলিপুরের পানচাষ ছিল আয়ের অন্যতম উৎস। পানের বরজ হয়ে উঠত যেন পরিবারের ব্যাংক। চাহিদা অনুযায়ী বরজ থেকে পান তুলে বিক্রি করেই শিক্ষা, চিকিৎসা, এমনকি জমিও কেনা হতো। আজ সেই বরজ চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে চাষিরা পড়ছেন লোকসানে।

পান্ডুল ইউনিয়নের আপুয়ার খাতা হিন্দুপাড়া গ্রামের পানচাষি বিমল চন্দ্র রায় জানান, বাবা-ঠাকুরদারা বরজ দিয়েই সংসার চালাতেন। এখন বরজের এক বছরের রক্ষণাবেক্ষণে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হলেও তেমন লাভ হয় না। বিশেষ করে বর্ষাকালে লোকসান গুনতে হয়।

স্থানীয় আরেক চাষি পবিত্র চন্দ্র বলেন, আমি বাবার কাছ থেকে পানচাষ শিখেছি। একসময় এলাকার অনেকেই বরজ করত। এখন লাভ না থাকায় অনেকে ধান বা সবজি চাষে চলে গেছেন।

৩০ বছর ধরে পানচাষ করছেন যতিন চন্দ্র। তিনি বলেন, ২০ শতক জমিতে বরজ আছে। এখান থেকেই সংসার চলে। প্রতিদিন সময় দিই বরজে। কিন্তু সরকারি কোনো সহায়তা না থাকায় বরজ বাড়ানো বা আধুনিকায়নের সুযোগ পাই না।”

চাষি মনোজিৎ কুমার অভিযোগ করেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ বাস্তবসম্মত নয়। অনেক সময় তারা শুধু ফর্মালিটিই করে। বরজ মালিকদের প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ বা সরঞ্জাম সহায়তা না দিলে এই চাষ আর টিকবে না।”

উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, পান চাষিরা অনেক ইউনিয়নে এখনো ভালো ফলন পাচ্ছেন। আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে পানচাষ আরও লাভজনক হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, পান্ডুল, তবকপুর ও ধরনীবাড়ি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে ২০০টি বরজ রয়েছে। এসব বরজ এখন অস্তিত্ব সংকটে। বরজ তৈরির খুঁটি, বাঁশ, ছাউনি ও জালের দাম বেড়ে গেছে। তাতে চাষিরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না।

চাষিদের দাবি, বরজ রক্ষায় প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ, উপকরণ সহায়তা ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে সরকারি হস্তক্ষেপ চান পানচাষিরা। নইলে প্রাচীন এই চাষ হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে।