এবার বিএসবির বাশারকে কিল-ঘুষি-লাথি, ডিম নিক্ষেপ

- আপডেট সময় : ১১:০০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ ৫৬ বার পড়া হয়েছে

এবার স্থানীয়দের রোষানলে পড়লেন বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার। আদালতে আনার সময় তাকে কিল, ঘুষি, লাথি মেরেছেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় তার ওপর ডিমও নিক্ষেপ করেন অনেকে। যদিও তার গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট পড়া ছিল।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
এদিন দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বাশারকে হাজতখানা থেকে এজলাসে তোলার জন্য বের করা হয়। সিএমএম আদালতের গেটে পৌঁছানো মাত্র তার ওপর ডিম নিক্ষেপ শুরু হয়। পরে তাকে দ্রুত সিএমএম আদালতের তৃতীয় তলায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহর আদালতে নেওয়া হয়।
এসময় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ভুক্তভোগীরা তাকে কিল, ঘুষি, চড়, লাথি মারতে থাকেন। আদালতের ঢোকার সময়ও তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে উপস্থিত জনতা।
পরে বাশারের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন খন্দকার আদালতকে বলেন, বাশার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান। লন্ডন, আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপ দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ক্যামব্রিয়ানের অনেক শিক্ষার্থীর জীবন শেষ। ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো কাজ করেছে। বর্তমান যুগের নমরুদ সে। প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ৫ কোটি টাকা খরচ করে বাশার বাহিনী গঠন করেছে। যারা টাকার জন্য যেত তাদের ওপর নির্যাতন চালাতো।
আইনজীবী আরও বলেন, তার কারণে অনেক স্টুডেন্টদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে গেছে। অভিভাবকরা পথে পথে ঘুরছে দেউলিয়া হয়ে। তার কারণে বাবা ছেলেকে হারিয়ে, আবার ছেলে বাবাকে হারিয়েছে। এখন সময় এসেছে, তাকে ধরতে পেরেছি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার ১০ দিন না, সর্বোচ্চ রিমান্ড প্রার্থনা করছি। যেন এটা নজীর হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, বাশার রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করেছে। জেনেছি চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে সে। এর মতো কুলাঙ্গারের সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
পরে তার আইনজীবী কাজী আনিসুর রহমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে কথা বলেতে চাইলে উপস্থিত কয়েকজন ভুক্তভোগী উচ্চ স্বরে বলতে থাকেন, আপনার লজ্জা নাই, নির্লজ্জ। পরে তিনি আর শুনানি করেননি। এরপর আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এসময় বিচারক বাশারকে প্রশ্ন করেন, টাকা নিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের জীবন কেন হুমকির মুখে ফেলে দিলেন। একবারও কি আপনার সন্তানদের কথা মনে পড়েনি? এই কাজগুলো (শিক্ষার্থীদের কাজ থেকে টাকা আত্মসাৎ) কেন করলেন? তখন বাশার নিশ্চুপ ছিলেন। ফের বিচারক বলেন, কোন কারণে তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হন বা অপারগ হন, তাহলে কেন টাকা ফেরত দেননি? তখনও তিনি কোন কিছুর উত্তর দেননি। এরপর বিচারক বলেন, আপনার বিরুদ্ধে কতটা মামলা হয়েছে জানেন? তখন বলেন, আনুমানিক ৭০ টা হয়েছে। তখন বিচারক বলেন, যত মামলা হয়েছে, মোকাবিলা করতে গেলে তো সারাজীবন কারাগারে কেটে যাবে। তখন বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, টাকাগুলো যে আত্মসাৎ করলেন আপনার মানবিক সত্ত্বা জাগ্রত হয়নি? কয়টা বিয়ে করেছেন। উত্তরে তিনি জানান, দুইটা। তখন আরেক প্রশ্ন করেন, আপনার সন্তান কয়জন? তখন তিনি বলেন, ছয়জন।
সোমবার খায়রুল বাশারকে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ।
বাশারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।