ঢাকা ০২:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মেধাভিত্তিক দেশ গঠনে শিক্ষা অপরিহার্য: ব্যারিস্টার অসীম Logo রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা Logo জুলাই যোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটা থাকছে না : মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা Logo ৮ দফা দাবিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেছেন শিক্ষার্থীরা Logo বিআরটিএ পাবনা সার্কেলের অভিযানে ১২ টি মামলা ও ২৯ হাজার টাকা জরিমানা Logo পদ্মার ভাঙনে সুজানগরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শ শ বাড়ীঘর ও ফসলী জমি Logo ৭ম জন্মদিনে স্বপ্নকে শাজাহানপুর প্রেসক্লাবের উষ্ণ অভিনন্দন! Logo টাইগারদের দাপুটে বোলিংয়ে বিধ্বস্ত পাক ব্যাটাররা, মামুলি লক্ষ্য বাংলাদেশের Logo মধ্যরাতে মদ্যপ অবস্থায় নোবেলের মারামারি, অতঃপর… Logo হাতে পবিত্র কোরআন লিখলেন ৯ বছরের শিশু
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

৩ জনের ডিএনএ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুরা বংশগত দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্ত

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৭:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫ ৫৩ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তিনজন মানুষের ডিএনএ ব্যবহার করে জন্ম নেওয়া শিশুরা বংশগত দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্ত। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ৮টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, যারা জটিল জেনেটিক রোগ থেকে মুক্ত।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে এই প্রথমবারের মতো তিন ব্যক্তির জেনেটিক উপাদান ব্যবহার করে সন্তান জন্মদানের প্রযুক্তি সফলভাবে প্রয়োগ করা হলো। যার মূল উদ্দেশ্য, মায়ের শরীর থেকে সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত ভয়াবহ মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ প্রতিরোধ করা।

এই পদ্ধতিতে মা ও বাবার ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর সঙ্গে আরেক নারীর একটি সুস্থ ডিম্বাণুর অংশ যুক্ত করা হয়। মূলত, মায়ের দেহে থাকা ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া সরিয়ে তার জায়গায় অন্য এক নারীর সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে জন্ম নেওয়া শিশুর শরীর মারাত্মক জিনগত রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকে।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে এ ধরনের চিকিৎসা ১০ বছর আগেই আইনি স্বীকৃতি পেয়েছিল। তবে এখনই প্রথম এর সফল ফল পাওয়া গেল। এই প্রযুক্তিতে ৮টি সুস্থ শিশুর জন্মগ্রহণ সম্ভব হলো।

মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ এমন এক জিনঘটিত সমস্যা, যা শুধু মায়ের দিক থেকে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে এবং শরীরের কোষে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। এতে শিশুদের দেহে দেখা দেয় নানান জটিলতা—যেমন হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়া, মস্তিষ্কে ক্ষতি, খিঁচুনি, অন্ধত্ব, পেশি দুর্বলতা, এমনকি অঙ্গ বিকল। অনেক সময় জন্মের কদিনের মধ্যেই শিশুর মৃত্যু ঘটে।

যেসব মায়েরা এই জিনগত ত্রুটির বাহক, তাদের ভবিষ্যৎ সন্তানও ঝুঁকিতে থাকে। তাই এই পদ্ধতি তাদের জন্য এক নতুন আশার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তিনজনের অংশগ্রহণে জন্ম নেওয়া এসব শিশুর প্রায় শতভাগ জেনেটিক উপাদান আসে মা ও বাবার কাছ থেকে। তৃতীয় নারীর ডিএনএ মাত্র ০.১ শতাংশ, যা শুধু মাইটোকন্ড্রিয়াল অংশে সীমাবদ্ধ এবং এটি ভবিষ্যত প্রজন্মেও প্রবাহিত হতে পারে।

নিউক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারে এই প্রক্রিয়ার অধীনে অংশ নেওয়া পরিবারগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছে। তবে তাদের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।

এক কন্যাশিশুর মা বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা অন্ধকারে ছিলাম। এই চিকিৎসা আমাদের জীবনে আলো এনে দিয়েছে। আজ আমাদের সন্তান সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে, এটা আমাদের জন্য এক অপার কৃতজ্ঞতার বিষয়।

এক পুত্রসন্তানের মা বলেন, এই প্রযুক্তি আর সহায়তা না পেলে আমরা হয়তো কখনও একটি পূর্ণ পরিবার পেতাম না। আজ আমরা শুধু আশা আর আনন্দে ভরে আছি।

মাইটোকন্ড্রিয়া কী?

মাইটোকন্ড্রিয়া হলো কোষের ক্ষুদ্র একক যা অক্সিজেন ব্যবহার করে খাবার থেকে শক্তি তৈরি করে। এই অঙ্গাণু শুধু মায়ের দিক থেকেই সন্তানের শরীরে আসে, তাই ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপনই ছিল এই চিকিৎসার মূল কৌশল।

নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি ও স্থানীয় হাসপাতালগুলোর গবেষণায় এক দশক আগে এই চিকিৎসা পদ্ধতির ভিত্তি তৈরি হয়। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা (এনএইচএস) বিভাগে চালু হয় একটি বিশেষায়িত ইউনিট।

চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল। প্রথমে মা ও দাতা দুই নারীর ডিম্বাণু এবং বাবার শুক্রাণু ল্যাবরেটরিতে নিষিক্ত করা হয়। এরপর ভ্রূণ গঠনের পর ডিএনএ-যুক্ত ‘প্রো-নিউক্লিয়াস’ অংশগুলো একত্র করে তা সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া-যুক্ত ভ্রূণে স্থাপন করা হয়। এর ফলে শিশুটি জেনেটিকভাবে তার মা-বাবার সন্তানই থাকে, তবে মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ থেকে থাকে মুক্ত।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

৩ জনের ডিএনএ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুরা বংশগত দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্ত

আপডেট সময় : ০৭:০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

তিনজন মানুষের ডিএনএ ব্যবহার করে জন্ম নেওয়া শিশুরা বংশগত দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্ত। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ৮টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, যারা জটিল জেনেটিক রোগ থেকে মুক্ত।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে এই প্রথমবারের মতো তিন ব্যক্তির জেনেটিক উপাদান ব্যবহার করে সন্তান জন্মদানের প্রযুক্তি সফলভাবে প্রয়োগ করা হলো। যার মূল উদ্দেশ্য, মায়ের শরীর থেকে সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত ভয়াবহ মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ প্রতিরোধ করা।

এই পদ্ধতিতে মা ও বাবার ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর সঙ্গে আরেক নারীর একটি সুস্থ ডিম্বাণুর অংশ যুক্ত করা হয়। মূলত, মায়ের দেহে থাকা ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া সরিয়ে তার জায়গায় অন্য এক নারীর সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে জন্ম নেওয়া শিশুর শরীর মারাত্মক জিনগত রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকে।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে এ ধরনের চিকিৎসা ১০ বছর আগেই আইনি স্বীকৃতি পেয়েছিল। তবে এখনই প্রথম এর সফল ফল পাওয়া গেল। এই প্রযুক্তিতে ৮টি সুস্থ শিশুর জন্মগ্রহণ সম্ভব হলো।

মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ এমন এক জিনঘটিত সমস্যা, যা শুধু মায়ের দিক থেকে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে এবং শরীরের কোষে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। এতে শিশুদের দেহে দেখা দেয় নানান জটিলতা—যেমন হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়া, মস্তিষ্কে ক্ষতি, খিঁচুনি, অন্ধত্ব, পেশি দুর্বলতা, এমনকি অঙ্গ বিকল। অনেক সময় জন্মের কদিনের মধ্যেই শিশুর মৃত্যু ঘটে।

যেসব মায়েরা এই জিনগত ত্রুটির বাহক, তাদের ভবিষ্যৎ সন্তানও ঝুঁকিতে থাকে। তাই এই পদ্ধতি তাদের জন্য এক নতুন আশার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তিনজনের অংশগ্রহণে জন্ম নেওয়া এসব শিশুর প্রায় শতভাগ জেনেটিক উপাদান আসে মা ও বাবার কাছ থেকে। তৃতীয় নারীর ডিএনএ মাত্র ০.১ শতাংশ, যা শুধু মাইটোকন্ড্রিয়াল অংশে সীমাবদ্ধ এবং এটি ভবিষ্যত প্রজন্মেও প্রবাহিত হতে পারে।

নিউক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারে এই প্রক্রিয়ার অধীনে অংশ নেওয়া পরিবারগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছে। তবে তাদের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।

এক কন্যাশিশুর মা বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা অন্ধকারে ছিলাম। এই চিকিৎসা আমাদের জীবনে আলো এনে দিয়েছে। আজ আমাদের সন্তান সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে, এটা আমাদের জন্য এক অপার কৃতজ্ঞতার বিষয়।

এক পুত্রসন্তানের মা বলেন, এই প্রযুক্তি আর সহায়তা না পেলে আমরা হয়তো কখনও একটি পূর্ণ পরিবার পেতাম না। আজ আমরা শুধু আশা আর আনন্দে ভরে আছি।

মাইটোকন্ড্রিয়া কী?

মাইটোকন্ড্রিয়া হলো কোষের ক্ষুদ্র একক যা অক্সিজেন ব্যবহার করে খাবার থেকে শক্তি তৈরি করে। এই অঙ্গাণু শুধু মায়ের দিক থেকেই সন্তানের শরীরে আসে, তাই ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপনই ছিল এই চিকিৎসার মূল কৌশল।

নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি ও স্থানীয় হাসপাতালগুলোর গবেষণায় এক দশক আগে এই চিকিৎসা পদ্ধতির ভিত্তি তৈরি হয়। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা (এনএইচএস) বিভাগে চালু হয় একটি বিশেষায়িত ইউনিট।

চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল। প্রথমে মা ও দাতা দুই নারীর ডিম্বাণু এবং বাবার শুক্রাণু ল্যাবরেটরিতে নিষিক্ত করা হয়। এরপর ভ্রূণ গঠনের পর ডিএনএ-যুক্ত ‘প্রো-নিউক্লিয়াস’ অংশগুলো একত্র করে তা সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া-যুক্ত ভ্রূণে স্থাপন করা হয়। এর ফলে শিশুটি জেনেটিকভাবে তার মা-বাবার সন্তানই থাকে, তবে মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ থেকে থাকে মুক্ত।