উত্তরা বিমান দুর্ঘটনা: এ কোন প্রশিক্ষণ, যেখানে প্রাণ যায়?

- আপডেট সময় : ১২:৪০:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে

দেশবাসী আজ স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্ম দিয়েছে, তা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়—এ যেন এক জাতীয় ট্র্যাজেডি। শেষ খবর পর্যন্ত ১৯ জন তরুণ প্রাণ ঝরে গেছে, যাদের অধিকাংশই ছিল প্রশিক্ষণার্থী—স্বপ্ন দেখা ভবিষ্যতের পাইলট।
এই দুর্ঘটনা কেবল হৃদয়বিদারক নয়, বরং প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনাকে।
কে দেবে এই প্রাণহানির হিসাব?
সারাদেশ যখন শোকাহত, তখন কিছু প্রশ্ন উত্তর চাচ্ছে—
কেন ত্রুটিপূর্ণ বিমান দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো?
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কীভাবে বিমান আকাশে উড়ল?
প্রশিক্ষণ শুরুর আগে কি যথাযথ মেরামত ও মান যাচাই হয়েছিল?
এতগুলো তরুণ প্রশিক্ষণার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী ব্যবস্থা ছিল?
এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে—পরিবার হারানো বাবা-মায়েরা, স্বজনেরা এবং পুরো জাতির কাছে। শুধু একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। দায়ীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অনিয়ম কি মৃত্যুর কারণ?
একটি সম্ভাব্য ধারণা হলো—বিমানটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত ও মেরামতবিহীন ছিল, কিংবা ছিল প্রযুক্তিগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। বারবার শুনি “ট্রেনিং বিমানে ছোটখাটো ত্রুটি স্বাভাবিক”, কিন্তু সেই ছোটখাটো ত্রুটি যদি একসাথে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নেয়, তখন সেটি আর “স্বাভাবিক” থাকে না—তা হয়ে ওঠে মারাত্মক অবহেলা।
শুধুই কি দুর্ঘটনা?
না, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। এটি একটি ‘সিস্টেম ফেইলিউর’। এটি তদারকির অভাব, দায়িত্বশীলতার ঘাটতি এবং মানুষের জীবনের প্রতি চরম উদাসীনতার প্রতিচ্ছবি।
কী চাই এখন?
স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত, যাতে দোষীরা চিহ্নিত হয়।
পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান অবিলম্বে বাতিল।
প্রশিক্ষণের মান ও নিরাপত্তা প্রটোকল যুগোপযোগী করা।
শহীদ প্রশিক্ষণার্থীদের পরিবারকে আজীবন ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা।
তরুণদের জীবন নিয়ে কোনো পরীক্ষা নয়। তাদের স্বপ্নগুলো আমাদের জাতীয় স্বপ্নের অংশ। একটি দায়িত্বহীনতা যেন আরও একটি স্বপ্নবীজ ধ্বংস না করে ফেলে—এই হোক আজকের শোকের সবচেয়ে বড় উপলব্ধি।
চলনবিলের সময়
সম্পাদক ও প্রকাশক
২২-৭-২৫ইং