ঢাকা ১১:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

ঢাকাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, এশিয়া কাপ অনিশ্চিত

স্পোর্টস ডেস্ক,চলনবিলের সময়
  • আপডেট সময় : ০১:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এশিয়া কাপ ২০২৫ এখনো মাঠে গড়ানোর আগেই জড়িয়ে পড়েছে কূটনৈতিক টানাপোড়েনে। মূল বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে এবার এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। ঢাকায় ২৪ ও ২৫ জুলাই অনুষ্ঠেয় এই সভা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

বিসিসিআই শুরু থেকেই সভাস্থল পরিবর্তনের দাবিতে অনড়। তাদের বক্তব্য, তারা ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সভায় অংশ নেবে না এবং এ দাবিতে ভারতের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও। ফলে সভার আইনগত বৈধতা নিয়েই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা, কারণ এসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অন্তত তিনটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের উপস্থিতি ছাড়া সভার কোরাম পূর্ণ হয় না।

কী নিয়ে এই উত্তেজনা?

বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন পিসিবি ও এসিসির সভাপতি মহসিন নকভি। তিনি বিকল্প কোনো ভেন্যুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেই জানা গেছে। এমনকি সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি বার্ষিক সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন না তিনি। বরং তখন তিনি ছিলেন কাবুলে—আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে ‘সরকারি সফরের’ আড়ালে এসিসির ঢাকার সভায় সমর্থন পেতে আলোচনা করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

অন্যদিকে আফগান ক্রিকেট বোর্ড (এসিসিবি) নাকি ভারতীয় ব্লককে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা ঢাকায় সভায় অংশ নেবে না। এই পরিস্থিতিতে কোরাম পূরণ নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। এদিকে এসিসির সহযোগী সদস্যদের অনেকে—যেমন নেপাল, কুয়েত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাহরাইন ও ইন্দোনেশিয়া—সভায় অংশ নেবন কি না, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

বাংলাদেশের ভূমিকা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই পুরো পরিস্থিতিতে নিজেকে নিরপেক্ষ রাখার চেষ্টা করলেও, আড়ালে চলছে নানা আলোচনা। বিসিবির অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি আমিনুল ইসলামের ঢাকায় সভা আয়োজনের সম্মতিকে অনেকে দেখছেন অভিজ্ঞতার অভাব হিসেবে।

একজন বিসিবি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্রিকবাজকে জানিয়েছেন, ‘এই সভা এখন কেবল ক্রিকেটীয় নয়, পুরোপুরি ভূরাজনৈতিক বিষয় হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট হয়তো অতটা উপলব্ধি করেননি। চাইলে আরও সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন।’

আরেকজন অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, ‘বিসিবির অনেক পরিচালক ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় সভা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, পিসিবিকে কথা দিয়েছেন—তাই আর পেছাতে পারবেন না।’

এশিয়া কাপ ঝুঁকিতে?

এই বিরোধ এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া কাপ আয়োজনেও, যা আগামী ১০-২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বিসিসিআইর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত এসেছে—ঢাকায় এজিএম হলে তারা এশিয়া কাপে অংশ নাও নিতে পারে। অন্যদিকে, পিসিবিও নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসেনি।

ভারত এই টুর্নামেন্টের আয়োজক, ফলে পাকিস্তান না খেললেও বিসিসিআই হয়তো খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়। তবে এসিসির জন্য বিষয়টি আর্থিক ও কূটনৈতিকভাবে গুরুতর—বিশেষ করে যখন সাম্প্রতিক সময়ে বার্মিংহামে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে ভারতীয় কিংবদন্তিরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামেননি শুধু শহীদ আফ্রিদির উপস্থিতির কারণে।

যখন ঢাকায় এজিএম আয়োজন ঘিরে বিতর্ক ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে, তখন এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ভবিষ্যৎও দোলাচলের মধ্যে। ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় কূটনীতি ও ক্রিকেটের ছায়াযুদ্ধ যে এশিয়ান ক্রিকেটেও প্রবলভাবে প্রভাব ফেলছে, সেটিই যেন প্রমাণ করে দিচ্ছে এই ঘটনাপ্রবাহ।

এই সপ্তাহের শেষ দিকে ঢাকায় কী ঘটে, সেটিই হয়তো ঠিক করে দেবে—এশিয়া কাপ হবে কি না, হলেও কে খেলবে আর কে নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ঢাকাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, এশিয়া কাপ অনিশ্চিত

আপডেট সময় : ০১:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

এশিয়া কাপ ২০২৫ এখনো মাঠে গড়ানোর আগেই জড়িয়ে পড়েছে কূটনৈতিক টানাপোড়েনে। মূল বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে এবার এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। ঢাকায় ২৪ ও ২৫ জুলাই অনুষ্ঠেয় এই সভা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

বিসিসিআই শুরু থেকেই সভাস্থল পরিবর্তনের দাবিতে অনড়। তাদের বক্তব্য, তারা ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সভায় অংশ নেবে না এবং এ দাবিতে ভারতের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও। ফলে সভার আইনগত বৈধতা নিয়েই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা, কারণ এসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অন্তত তিনটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের উপস্থিতি ছাড়া সভার কোরাম পূর্ণ হয় না।

কী নিয়ে এই উত্তেজনা?

বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন পিসিবি ও এসিসির সভাপতি মহসিন নকভি। তিনি বিকল্প কোনো ভেন্যুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেই জানা গেছে। এমনকি সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি বার্ষিক সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন না তিনি। বরং তখন তিনি ছিলেন কাবুলে—আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে ‘সরকারি সফরের’ আড়ালে এসিসির ঢাকার সভায় সমর্থন পেতে আলোচনা করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

অন্যদিকে আফগান ক্রিকেট বোর্ড (এসিসিবি) নাকি ভারতীয় ব্লককে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা ঢাকায় সভায় অংশ নেবে না। এই পরিস্থিতিতে কোরাম পূরণ নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। এদিকে এসিসির সহযোগী সদস্যদের অনেকে—যেমন নেপাল, কুয়েত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাহরাইন ও ইন্দোনেশিয়া—সভায় অংশ নেবন কি না, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

বাংলাদেশের ভূমিকা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই পুরো পরিস্থিতিতে নিজেকে নিরপেক্ষ রাখার চেষ্টা করলেও, আড়ালে চলছে নানা আলোচনা। বিসিবির অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি আমিনুল ইসলামের ঢাকায় সভা আয়োজনের সম্মতিকে অনেকে দেখছেন অভিজ্ঞতার অভাব হিসেবে।

একজন বিসিবি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্রিকবাজকে জানিয়েছেন, ‘এই সভা এখন কেবল ক্রিকেটীয় নয়, পুরোপুরি ভূরাজনৈতিক বিষয় হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট হয়তো অতটা উপলব্ধি করেননি। চাইলে আরও সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন।’

আরেকজন অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, ‘বিসিবির অনেক পরিচালক ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় সভা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, পিসিবিকে কথা দিয়েছেন—তাই আর পেছাতে পারবেন না।’

এশিয়া কাপ ঝুঁকিতে?

এই বিরোধ এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া কাপ আয়োজনেও, যা আগামী ১০-২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বিসিসিআইর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত এসেছে—ঢাকায় এজিএম হলে তারা এশিয়া কাপে অংশ নাও নিতে পারে। অন্যদিকে, পিসিবিও নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসেনি।

ভারত এই টুর্নামেন্টের আয়োজক, ফলে পাকিস্তান না খেললেও বিসিসিআই হয়তো খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়। তবে এসিসির জন্য বিষয়টি আর্থিক ও কূটনৈতিকভাবে গুরুতর—বিশেষ করে যখন সাম্প্রতিক সময়ে বার্মিংহামে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে ভারতীয় কিংবদন্তিরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামেননি শুধু শহীদ আফ্রিদির উপস্থিতির কারণে।

যখন ঢাকায় এজিএম আয়োজন ঘিরে বিতর্ক ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে, তখন এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ভবিষ্যৎও দোলাচলের মধ্যে। ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় কূটনীতি ও ক্রিকেটের ছায়াযুদ্ধ যে এশিয়ান ক্রিকেটেও প্রবলভাবে প্রভাব ফেলছে, সেটিই যেন প্রমাণ করে দিচ্ছে এই ঘটনাপ্রবাহ।

এই সপ্তাহের শেষ দিকে ঢাকায় কী ঘটে, সেটিই হয়তো ঠিক করে দেবে—এশিয়া কাপ হবে কি না, হলেও কে খেলবে আর কে নয়।