বিজিবির গুলিতে ৩ জন নিহতের ঘটনায় ৬ বছর পর মামলা

- আপডেট সময় : ০১:৫৫:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫ ৩৩ বার পড়া হয়েছে

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে গরু জব্দ নিয়ে সংঘর্ষে বিজিবির গুলিতে তিনজন নিহত ও ১৮ জন আহতের ঘটনার সাড়ে ছয় বছর পর আদালতে মামলা করেছেন এক কলেজছাত্র।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক রাজিব কুমার রায় মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন—বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হরিপুর উপজেলার বেতনা বিওপির নায়েক মো. হাবিবুল্লাহ (৩৭), নায়েক দেলোয়ার হোসেন (৩৫), সিপাহি হাবিবুর রহমান (৩৫), সিপাহি মুরসালিন (৩৭), সিপাহি বায়রুল ইসলাম (৩৩), নায়েক সুবেদার জিয়াউর রহমান (৪০) ও অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন।
মামলার বাদী আব্দুল কাশেম (২৫) হরিপুর উপজেলার রুহিয়া গ্রামের আমিরুল হকের ছেলে। আবুল কাশেম হরিপুর সরকারি মোসলেম উদ্দিনের কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহরমপুর গ্রামের হুকুম হাজীর ছেলে হবিবর রহমান দুটি গরু ও রুহিয়া গ্রামের নাজিম তিনটি গরু জাদুরানী হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় বেতনা সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা গরুগুলো আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিল। বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও কেন গরুগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা তাদের পেটে রাইফেলের নল ঠেকায়। এ দৃশ্য দেখে গ্রামবাসী প্রতিবাদ করে। এ সময় বিজিবির সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই নবাব, সাদেক ও জয়নুল মারা যান।
বিজিবির দাবি, ভারতীয় গরু জব্দ করায় সশস্ত্র চোরাকারবারিরা হামলা করলে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হন।
গ্রামবাসী দাবি করে বলেন, বৈধ কাগজ থাকার পরও বিজিবি সদস্যরা গরু নিয়ে যাচ্ছিল। তার প্রতিবাদ করায় বিজিবি গুলি চালায়। তাদের গুলিতে হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের রুহিয়া গ্রামের নজরুলের ছেলে দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. নবাব (২৬), একই গ্রামের জহির উদ্দীনের ছেলে মো. সাদেক (৩৬) ও বহরমপুর গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জয়নুল (১২) নিহত হয়। এ ঘটনায় ১৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেছিলেন, চোরাই গরু ঢুকেছে সন্দেহে বিজিবি অভিযান চালায়। তারা বেশ কয়েকটি গরু জব্দ করে। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষ বাধে এবং গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তখন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীলাব্রত কর্মকারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছিল।
মামলার বাদী মো. আবুল কাশেম কালবেলাকে বলেন, সেদিন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে রাস্তায় দেখি বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে গরু আটক নিয়ে বাগবিতণ্ডা চলছিল। এমন সময় হঠাৎ করে বিজিবির ছোড়া গুলি আমার ডান চোখে এসে লাগে। এতে আমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের মামলা পুলিশ নেয়নি। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই দুটি মামলা করে বিজিবি। তাদের মামলায় আমি দুবার জেলও খেটেছি।
নিহত নবাবের ভাই সুজা বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমরা মামলা করতে পারিনি। এখন আমাদের মামলা বিজ্ঞ আদালত আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পাব।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বিজিবির গুলিতে ছাত্রসহ তিনজন নিহত ও ১৮ জন আহতের ঘটনায় ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে একটি মামলা করেছেন মো. আবুল কাশেম। মামলাটি আদালতের বিচারক পিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এতদিন ভয়ভীতি কারণে ভুক্তভোগীরা কোথাও মামলা করতে পারেনি। আজ সেই সুযোগ বা পরিবেশ পেয়েছে। আশা করি তারা ন্যায়বিচার পাবে।
হরিপুর থানা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ জাকারিয়া মণ্ডল বলেন, বিজিবির গুলিতে নিহতের ঘটনাটি অনেক পুরোনো। ভুক্তভোগীরা কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। তবে আদালতে মামলা করতে পারে। এখনো আদালতের নির্দেশনা বা কোনো কাগজ হাতে পাইনি।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজীম আহমেদ বলেন, হরিপুরে বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনাটি অনেক আগের। আমি তখন ছিলাম না, পরে শুনেছি।
তিনি আরও বলেন, তবে আবুল কাশেম যে মামলা করেছে সেটার বিষয়ে আমি জানি না। এখনো কোনো নোটিশ আমার হাতে আসেনি।