মহাকাশে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার

- আপডেট সময় : ০৭:২৯:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫ ৪৩ বার পড়া হয়েছে

পৃথিবীর বাইরেও কি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে? এ প্রশ্নে ঘেরা রহস্যের জট যেন আরও এক ধাপ খুলে গেল। এবার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজরে এসেছে এক নতুন গ্রহ- এল ৯৮-৫৯এফ, যেটি অনেকটা পৃথিবীর মতো। পৃথিবীর তুলনায় বড় হওয়ায় বিজ্ঞানীরা এর নামও দিয়েছেন ‘সুপার আর্থ’।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুপার আর্থ অবস্থান করছে ‘হ্যাবিটেবল জোন’-এ। এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে তরল পানির অস্তিত্ব সম্ভব, অর্থাৎ প্রাণ সৃষ্টির উপযোগী পরিবেশ থাকতে পারে।
পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৫ আলোকবর্ষ দূরে থাকা লাল বামন তারকা এল ৯৮-৫৯-এর চারপাশে আবর্তনকারী পাঁচটি গ্রহের মধ্যে এটি সর্বশেষ আবিষ্কৃত। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব মনট্রিয়ালের ট্রোটিয়ের ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন এক্সোপ্লানেটস (আইআরইএক্স)-এর গবেষক দল এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন।
গবেষণার প্রধান লেখক ক্যাডিয়ু বলেন, ‘এল ৯৮-৫৯ গ্রহপুঞ্জ নিয়ে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র। মহাকাশ ও পৃথিবী থেকে সংগৃহীত তথ্য একত্র করে আমরা কতটা অগ্রসর হতে পারি, এই গবেষণা তার বড় প্রমাণ।’ তিনি আরও জানান, এই গ্রহটি ভবিষ্যতে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিশ্লেষণের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য হয়ে উঠবে।
প্রাণ ধারণের মতো পরিবেশ?
নতুন গ্রহ এল ৯৮-৫৯এফ একটি প্রায় বৃত্তাকার কক্ষপথে তার নিজস্ব নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে এবং পৃথিবীর মতোই তার কাছ থেকে শক্তি গ্রহণ করে। এর ভর পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ২.৮ গুণ বেশি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ গ্রহে যদি বায়ুমণ্ডল থাকে, তবে সেখানে তরল পানি, কার্বন ডাই-অক্সাইড, এমনকি জীবনের ইঙ্গিতদায়ী উপাদান (biosignatures) থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিভাবে এই গ্রহ আবিষ্কৃত হলো?
২০১৯ সালে নাসার মহাকাশ টেলিস্কোপ এল ৯৮-৫৯ তারার চারপাশে প্রথম তিনটি গ্রহ শনাক্ত করে। পরবর্তীতে ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরির স্পেকট্রোগ্রাফ চতুর্থ গ্রহের অস্তিত্ব নিশ্চিত করে। সর্বশেষ আইআরইএক্স-এর গবেষকরা পঞ্চম গ্রহ এল ৯৮-৫৯এফ শনাক্ত করেন, যার অবস্থান তারার ‘হ্যাবিটেবল জোনে’- এই অঞ্চলেই তরল পানি থাকতে পারে।
আইআরইএক্স পরিচালক ও গবেষণার সহ-লেখক রেনে দোয়ঁ বলেন, ‘এল ৯৮-৫৯-এর মতো একটি বৈচিত্র্যময় গ্রহপুঞ্জ আমাদের জন্য একটি প্রাকৃতিক পরীক্ষাগার। এখানে আমরা জানতে পারি- সুপার-আর্থ ও সাব-নেপচুনগুলো কী দিয়ে গঠিত, ছোট তারার চারপাশে গ্রহ তৈরির ধরন কেমন এবং এ ধরনের পাথুরে গ্রহগুলো দীর্ঘ সময় ধরে কীভাবে বায়ুমণ্ডল ধরে রাখে।
এই গবেষণার বিস্তারিত প্রতিবেদন শিগগিরই The Astronomical Journal-এ “Detailed Architecture of the L 98-59 System and Confirmation of a Fifth Planet in the Habitable Zone” শিরোনামে প্রকাশিত হবে।
মানবজাতির হাজার বছরের প্রশ্ন- ‘আমরা কি মহাবিশ্বে একা?’ তার উত্তর খুঁজে পাওয়ার পথে এই আবিষ্কার হতে পারে এক নতুন সূচনা।
সূত্র : এনডিটিভি