তিস্তার পানি কমছে, বাড়ছে নদীভাঙন : আতঙ্কে তীরবর্তী মানুষ

- আপডেট সময় : ০৯:০০:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ ৪৫ বার পড়া হয়েছে

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ করে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এমন চিত্র দেখা গেলেও বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। এতে নদীতীরবর্তী এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ৬টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি ছিল বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) সমান। সকাল ৯টায় তা কমে ৫২ দশমিক ০৭ সেন্টিমিটার হয়, অর্থাৎ ৮ সেন্টিমিটার নিচে নামে। তবে দুপুরের পর আবারও পানি বাড়তে শুরু করে এবং কিছু সময়ের জন্য বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, ‘রাত থেকেই পানি কিছুটা কমেছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও উজানে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছি।
এর আগে মঙ্গলবার রাতেও তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়, ফলে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ আতঙ্কে রাত কাটান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এরইমধ্যে ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখরিবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি, গয়াবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে নদীতীরবর্তী একাধিক পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
খালিশা চাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কিছু আমন ধানের চারা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পানি কমলেও, যদি আবার বন্যা আসে, তাহলে নতুন করে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানিতে আমরা প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমরা আর ত্রাণ চাই না, চাই দ্রুত ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন। এটাই এখন আমাদের বাঁচার একমাত্র উপায়।
ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘তিস্তার পানি আপাতত বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বড় ধরনের ঝুঁকি নেই, তবে আমাদের টিম সতর্ক রয়েছে এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বাপাউবো) জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাত হলে তিস্তার পানি আবারও বাড়তে পারে। ফলে এখনও ঝুঁকি কাটেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, ‘নদী তীরবর্তী জনগণের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে।
জানা গেছে, তিস্তার দুই তীরে বসবাসকারী মানুষ এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। একদিকে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমছে, অন্যদিকে নদীভাঙনের দগদগে ক্ষত আবারও নতুন করে তীব্র দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের জন্য সাধারণ মানুষের কণ্ঠে এখন সবচেয়ে বড় দাবি—‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন।