ঢাকা ০২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

অফিস বয় থেকে কোটি টাকার মালিক বদরুজ্জামান

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:২৭:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫ ১৩ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসলামী সংগীত পরিবেশক দল ‘কলরবের’ প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার অভিযোগ করেছেন, সংগঠনটি ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত কোটি টাকার এক দুর্নীতির সাম্রাজ্য।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আজাদের বড় ভাই মো. শামসুল আলম।

শামসুল আলম জানান, কলরব তার ভাইয়ের হৃদয়ের সংগঠন ছিল, যেটি তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল নিষ্ঠা ও শ্রমের সংগঠন। কিন্তু আজ সেই সংগঠনটি অফিস বয় বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে পড়ে লুটপাটের সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

তিনি জানান, তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর মোবাইল ফোনে কলার টিউন ও রিং ব্যাক টিউন হিসেবে কলরবের গজল ব্যবহারে বিপুল অর্থ আয় শুরু হয়। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কাছে সে আয়ের কোনো হিসাব কখনোই আসেনি। বরং কৌশলে সংগঠনের সমস্ত আয় এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন বদরুজ্জামান। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে আসা স্পন্সর, অনুদান, কনটেন্ট আয়ের সমস্ত কিছুই জমা হয় এখন বদরুজ্জামানের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ‘হলিটিউন’-এর নামে।

সংবাদ সম্মেলনে আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা জানান, তার সন্তানরা আজ এতিম। তারা কলরবের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরি হয়েও কোনো সম্মান, কোনো আর্থিক সুবিধা তো দূরে থাক, বরং সবদিক থেকেই বঞ্চিত। অথচ যারা একসময় অফিস বয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তারা এখন একের পর এক ফ্ল্যাট, গাড়ি, প্রোডাকশন হাউজের মালিক।

সংবাদ সম্মেলনে আজাদের পরিবার দাবি করে, কলরবের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক বদরুজ্জামান এবং প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস শুধু সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ করেননি, বরং প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি, শ্রম ও সুনামকেও ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের পেছনে। সংগঠনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম বদলে ‘হলিটিউন’ করে ফেলা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব শুধু গোপনই নয়, বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্যান্য সদস্যদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে মাসোহারা, উপহার এবং হুমকির মাধ্যমে।

আজাদের পরিবারের ভাষ্য, কলরব প্রতিষ্ঠার সময় যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই আজ সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন, কেউ কেউ চুপ থাকেন নিরুপায় হয়ে। যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা একে একে বহিষ্কৃত হয়েছেন। অথচ সংগঠনের আয় বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানি, করপোরেট স্পন্সর, ইউটিউব এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এসব থেকে সংগঠনের তেমন কোনো স্থায়ী সম্পদ তৈরি না হলেও বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠজনরা হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক, যা তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৪ সালে ইসলামী শিল্পী দল ‘কলরব’ প্রতিষ্ঠা করেন আইনুদ্দীন আল আজাদ। ২০১০ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে কলরব শিল্পী দল বদরুজ্জামান ও রশিদ আহম্মেদ ফেরদৌস পরিচালনা করে আসছেন। কথা ছিল কলরব থেকে উপার্জিত অর্থ তার পরিবারকে প্রদান করা হবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি আয় হলেও আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবারকে কিছুই দেওয়া হয় না। উপরন্তু জালিলয়াতির মাধ্যমে শিল্পীগোষ্ঠীর সমস্ত সম্পদ নিজেদের নাম করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কলরবের অফিস বয় বদরুজ্জামান ইউটিউব, ব্রাইট সলিউশন মাল্টিমিডিয়া লিমিডেট ও হলি টিউনসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্রবাসি সিটি, হেলিকপ্টারসহ গ্রুপ অব কোম্পানির শীর্ষ শেয়ারদারি মালিক। অথচ আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার আজ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন, স্ত্রী ও সন্তানরা আর্থিক কষ্টে ভুগছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে আইনুদ্দীন আল আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা, শ্বশুর গোলাম নবী, ছেলে গালিব বিন আজাদ, বড় মামা সাইফুল ইসলাম ও ছোট মামা শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

অফিস বয় থেকে কোটি টাকার মালিক বদরুজ্জামান

আপডেট সময় : ০৩:২৭:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ইসলামী সংগীত পরিবেশক দল ‘কলরবের’ প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার অভিযোগ করেছেন, সংগঠনটি ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত কোটি টাকার এক দুর্নীতির সাম্রাজ্য।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আজাদের বড় ভাই মো. শামসুল আলম।

শামসুল আলম জানান, কলরব তার ভাইয়ের হৃদয়ের সংগঠন ছিল, যেটি তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল নিষ্ঠা ও শ্রমের সংগঠন। কিন্তু আজ সেই সংগঠনটি অফিস বয় বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে পড়ে লুটপাটের সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

তিনি জানান, তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর মোবাইল ফোনে কলার টিউন ও রিং ব্যাক টিউন হিসেবে কলরবের গজল ব্যবহারে বিপুল অর্থ আয় শুরু হয়। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কাছে সে আয়ের কোনো হিসাব কখনোই আসেনি। বরং কৌশলে সংগঠনের সমস্ত আয় এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন বদরুজ্জামান। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে আসা স্পন্সর, অনুদান, কনটেন্ট আয়ের সমস্ত কিছুই জমা হয় এখন বদরুজ্জামানের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ‘হলিটিউন’-এর নামে।

সংবাদ সম্মেলনে আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা জানান, তার সন্তানরা আজ এতিম। তারা কলরবের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরি হয়েও কোনো সম্মান, কোনো আর্থিক সুবিধা তো দূরে থাক, বরং সবদিক থেকেই বঞ্চিত। অথচ যারা একসময় অফিস বয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তারা এখন একের পর এক ফ্ল্যাট, গাড়ি, প্রোডাকশন হাউজের মালিক।

সংবাদ সম্মেলনে আজাদের পরিবার দাবি করে, কলরবের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক বদরুজ্জামান এবং প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস শুধু সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ করেননি, বরং প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি, শ্রম ও সুনামকেও ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের পেছনে। সংগঠনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম বদলে ‘হলিটিউন’ করে ফেলা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব শুধু গোপনই নয়, বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্যান্য সদস্যদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে মাসোহারা, উপহার এবং হুমকির মাধ্যমে।

আজাদের পরিবারের ভাষ্য, কলরব প্রতিষ্ঠার সময় যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই আজ সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন, কেউ কেউ চুপ থাকেন নিরুপায় হয়ে। যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা একে একে বহিষ্কৃত হয়েছেন। অথচ সংগঠনের আয় বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানি, করপোরেট স্পন্সর, ইউটিউব এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এসব থেকে সংগঠনের তেমন কোনো স্থায়ী সম্পদ তৈরি না হলেও বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠজনরা হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক, যা তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৪ সালে ইসলামী শিল্পী দল ‘কলরব’ প্রতিষ্ঠা করেন আইনুদ্দীন আল আজাদ। ২০১০ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে কলরব শিল্পী দল বদরুজ্জামান ও রশিদ আহম্মেদ ফেরদৌস পরিচালনা করে আসছেন। কথা ছিল কলরব থেকে উপার্জিত অর্থ তার পরিবারকে প্রদান করা হবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি আয় হলেও আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবারকে কিছুই দেওয়া হয় না। উপরন্তু জালিলয়াতির মাধ্যমে শিল্পীগোষ্ঠীর সমস্ত সম্পদ নিজেদের নাম করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কলরবের অফিস বয় বদরুজ্জামান ইউটিউব, ব্রাইট সলিউশন মাল্টিমিডিয়া লিমিডেট ও হলি টিউনসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্রবাসি সিটি, হেলিকপ্টারসহ গ্রুপ অব কোম্পানির শীর্ষ শেয়ারদারি মালিক। অথচ আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার আজ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন, স্ত্রী ও সন্তানরা আর্থিক কষ্টে ভুগছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে আইনুদ্দীন আল আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা, শ্বশুর গোলাম নবী, ছেলে গালিব বিন আজাদ, বড় মামা সাইফুল ইসলাম ও ছোট মামা শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।