ঢাকা ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

মায়ের বুকের দুধ পায় না ৪৫ শতাংশ শিশু

চলনবিলের সময় নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৭:১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শিশুর জন্মের প্রথম ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো একটি শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে। ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পরিপূরক বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। অথচ দেশের ৪৫ শতাংশ মা তাদের সন্তানদের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত রাখেন।

এমতাবস্থায় এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে আজ শুক্রবার থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। দিবসটি উপলক্ষে অন্তঃসত্ত্বা মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাতৃদুগ্ধ দান, মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশুখাদ্য এবং পুষ্টিবিষয়ক অবহিতকরণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং কমিউনিটি পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে ১, ২ ও ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. রওশন জাহান আখতার আলো বলেন, ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে থাকে। এ বছর ১, ২ ও ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি থাকায়, কবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে, সেটা জানতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশনের (ডাব্লিউএবিএ) দেওয়া এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘টেকসই সহায়তা ব্যবস্থা তৈরি করুন’।

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ বিডিএইচএসের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ সালে ৬৫ শতাংশ শিশু মায়ের বুকের দুধ পেলেও, বর্তমানে এ হার কমে হয়েছে ৫৫ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরায়ণ ও কর্মজীবী নারীর হার বেড়ে যাওয়া এবং কর্মজীবী মায়েদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশসহ বুকের দুধ পান করানোর পর্যাপ্ত কর্নার না থাকা। সেইসঙ্গে ফর্মুলা দুধ উৎপাদক ও বাজারজাতকারীদের বিজ্ঞাপনের কারণে দিনদিন সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পানের হার কমছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ (এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং) শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যা কমায় এবং ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শিশুমৃত্যু কমায়। দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ বাড়ে। এ ছাড়া অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।

শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ) ডা. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে এক ফোঁটা পানিও দেওয়া যাবে না। যখন একটা শিশু মায়ের গর্ভে থাকে, তখন থেকেই তার মস্তিষ্কের বিকাশের কাজ শুরু হয়ে যায়। জন্মের পর শিশুর মস্তিষ্কে আর নতুন করে কোনো কোষ (সেল) তৈরি হয় না। একটা শিশু ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) মস্তিষ্কের কোষ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর এই কোষগুলোর মাত্র ২৫ শতাংশের যোগাযোগ বা সংযোগ থাকে নিউরনে (স্নায়ুকোষ)। বাকিগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশের সংযোগ স্থাপনের কাজ জন্মের তিন বছরের মধ্যে হয়ে যায়।

১৯৯০ সালে ইউনিসেফ বিশ্বব্যাপী শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে ইনোসেন্টি ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশন গঠন হয়। প্রথম বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ১৯৯২ সালে পালিত হয়। প্রতি বছর ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

মায়ের বুকের দুধ পায় না ৪৫ শতাংশ শিশু

আপডেট সময় : ০৭:১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

শিশুর জন্মের প্রথম ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো একটি শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে। ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পরিপূরক বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। অথচ দেশের ৪৫ শতাংশ মা তাদের সন্তানদের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত রাখেন।

এমতাবস্থায় এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে আজ শুক্রবার থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। দিবসটি উপলক্ষে অন্তঃসত্ত্বা মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাতৃদুগ্ধ দান, মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশুখাদ্য এবং পুষ্টিবিষয়ক অবহিতকরণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং কমিউনিটি পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে ১, ২ ও ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. রওশন জাহান আখতার আলো বলেন, ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে থাকে। এ বছর ১, ২ ও ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি থাকায়, কবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে, সেটা জানতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশনের (ডাব্লিউএবিএ) দেওয়া এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘টেকসই সহায়তা ব্যবস্থা তৈরি করুন’।

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ বিডিএইচএসের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ সালে ৬৫ শতাংশ শিশু মায়ের বুকের দুধ পেলেও, বর্তমানে এ হার কমে হয়েছে ৫৫ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরায়ণ ও কর্মজীবী নারীর হার বেড়ে যাওয়া এবং কর্মজীবী মায়েদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশসহ বুকের দুধ পান করানোর পর্যাপ্ত কর্নার না থাকা। সেইসঙ্গে ফর্মুলা দুধ উৎপাদক ও বাজারজাতকারীদের বিজ্ঞাপনের কারণে দিনদিন সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পানের হার কমছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ (এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং) শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যা কমায় এবং ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শিশুমৃত্যু কমায়। দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ বাড়ে। এ ছাড়া অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।

শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ) ডা. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে এক ফোঁটা পানিও দেওয়া যাবে না। যখন একটা শিশু মায়ের গর্ভে থাকে, তখন থেকেই তার মস্তিষ্কের বিকাশের কাজ শুরু হয়ে যায়। জন্মের পর শিশুর মস্তিষ্কে আর নতুন করে কোনো কোষ (সেল) তৈরি হয় না। একটা শিশু ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) মস্তিষ্কের কোষ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর এই কোষগুলোর মাত্র ২৫ শতাংশের যোগাযোগ বা সংযোগ থাকে নিউরনে (স্নায়ুকোষ)। বাকিগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশের সংযোগ স্থাপনের কাজ জন্মের তিন বছরের মধ্যে হয়ে যায়।

১৯৯০ সালে ইউনিসেফ বিশ্বব্যাপী শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে ইনোসেন্টি ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশন গঠন হয়। প্রথম বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ১৯৯২ সালে পালিত হয়। প্রতি বছর ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়।