৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ, গঠনতন্ত্র নিয়ে বিতর্ক

- আপডেট সময় : ১১:০৯:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘ ৩৫ বছর অচল থাকার পর অবশেষে সচল হওয়ার পথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের পাশাপাশি গঠনতন্ত্রও সংশোধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নির্বাচন আয়োজনের এ প্রক্রিয়াকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন স্বাগত জানালেও গঠনতন্ত্রের কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
শুক্রবার (০১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫৯তম সিন্ডিকেট সভায় সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। এর আগে নির্বাচন পরিচালনায় কমিটি গঠন করা হয়।
সংশোধিত গঠনতন্ত্রে চাকসুর কার্যনির্বাহী কমিটিতে ২৮টি পদ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নির্বাহী সদস্য পদ। আগের গঠনতন্ত্রেও পদসংখ্যা ছিল ২৮টি। তবে সেখানে নির্বাহী সদস্য পদ ছিল ১০টি। নতুন গঠনতন্ত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনা ও দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার যুক্ত করা হয়েছে।
সদস্যপদ নিয়ে বিতর্ক : নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেবল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ও আবাসিক হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক, মাস্টার্স, এমফিল অথবা পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নরত এবং আবাসিক হলের সঙ্গে যুক্ত এবং যাদের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে, তারাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন সব পক্ষকে নিয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে বসেছিল তখন সব পক্ষই এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আপত্তি জানায়। তবু প্রশাসন তাদের প্রার্থিতা ও ভোটাধিকারের সুযোগ দিচ্ছে।
এমফিল ও পিএইচডি গবেষকদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ রেখে এবং বয়সসীমা ৩০ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো বিশেষ সংগঠনের জন্য রাস্তা পরিষ্কার করছে কি না, সে প্রশ্ন তুলে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমরা এই নিয়ম মানি না। আমরা চাই, ছাত্রসমাজের প্রকৃত প্রতিনিধিরাই যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। চাকসু হোক ছাত্রসমাজের, কোনো সংগঠনের নয়।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কালবেলাকে বলেন, ‘চাকসুর নীতিমালা নিয়ে যে সভা হয়েছিল, সেখানে আমরা সবার মতোই বলেছি- শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবে। এখন যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী এমফিল, পিএইচডির শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, আমরা এর বিরোধিতা করছি না।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আজাদ হোসেন বলেন, ‘চাকসু নির্বাচন ও এর গঠনতন্ত্র নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকে স্পষ্ট করে জানিয়েছি যেন কেবল অনার্স ও মাস্টার্সের নিয়মিত শিক্ষার্থীদেরই প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থেই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমফিল ও পিএইডির শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিচ্ছে এবং ৩০ বছর বয়সের সীমা নির্ধারণ করেছে। আমরা আগে দেখেছি এ ধরনের ব্যবস্থা নির্দিষ্ট কিছু কায়েমি স্বার্থের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে রাখা হয়। আমরা আগেও এর বিরোধিতা করেছি, এখনো করছি।
ছাত্র অধিকার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব রোমান রহমান বলেন, ‘এমফিল ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের ভোটার হিসেবে রাখার বিষয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন বিষয়টি শোনেনি। বয়সসীমা নিয়েও আমাদের আপত্তি আছে। আমরা ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার বয়সসীমা ২৬ চাই।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘চাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের মতামতের অগ্রাধিকার দিতে হবে; কিন্তু চাকসু নির্বাচন সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এট পুনর্বিবেচনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সদস্যপদ নিয়ে আপত্তি চাকসুর সাবেক নেতাদেরও : এমফিল ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের চাকসুর সদস্য করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে চাকসুর সাবেক ভিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এএসএম শামসুজ্জামান হীরা কালবেলাকে বলেন, এটা সঠিক হয়নি। যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী তারাই ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করবে; কিন্তু যারা এমফিল ও পিএইচডির গবেষক তারা তো গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তাদের ছাত্র সংসদে না থাকাই ভালো।
আরেক সাবেক ভিপি মাজহারুল হক শাহ্ চৌধুরী বলেন, এমফিল ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের সদস্যপদ আগে ছিল না। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী মনে করে দিচ্ছে তা বিস্তারিত জানতে হবে।
কর্তৃপক্ষ যা বলছে : চাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনবিষয়ক কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘৭৩-এর অ্যাক্টের কারণে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নকারীদের চাকসুর ভোটার রাখা হয়েছে। অ্যাক্ট অনুযায়ী তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত। তবে আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করতে কিছু শর্ত দিয়েছি। তাদের এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে হবে, বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৩০।নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার গঠনতন্ত্র সংস্কার পূর্বক অনুমোদন হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অচিরেই তারা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।
চাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো সংশোধিত গঠনতন্ত্র হাতে পাইনি। গঠনতন্ত্র হাতে ফেলে সবার সঙ্গে বসে করণীয় নির্ধারণ করব।