ঢাকা ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

‘জাতিসংঘের বেশিরভাগ রিপোর্ট কেউ পড়ে না’—স্বীকারোক্তি সংস্থাটিরই

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক,
  • আপডেট সময় : ১১:৪৬:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতিসংঘ প্রতিবছর হাজারেরও বেশি প্রতিবেদন তৈরি করে। কিন্তু এর অধিকাংশই বাস্তবে পাঠকের চোখে পড়ে না। সম্প্রতি প্রকাশিত এক অভ্যন্তরীণ সংস্কারমূলক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির নিজস্ব এই পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় সভা ও অপ্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনের ভারে জাতিসংঘ কার্যত নতজানু হয়ে পড়েছে।

২০২৫ সালে জাতিসংঘের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংস্থার কাজের গতি ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে শুরু হয়েছে এক বিশেষ উদ্যোগ—‘UN80 Task Force’। গত মার্চে এটি চালু করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

৩১ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু গত বছরই জাতিসংঘে হয়েছে ২৭ হাজার সভা—যেখানে অংশ নেয় প্রায় ২৪০টি সংস্থা ও কমিটি। এ সময় তৈরি হয়েছে ১ হাজার ১০০টি প্রতিবেদন, যা ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, এই বিপুল পরিমাণ প্রতিবেদনের সিংহভাগই কোনো কাজে আসে না। মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিবেদন ৫ হাজার ৫০০ বারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। আবার প্রতি পাঁচটি প্রতিবেদনের একটি এক হাজারেরও কমবার ডাউনলোড হয়েছে। তাও ডাউনলোড মানেই যে পাঠক তা পড়েছেন, তা নয় বলেও মন্তব্য করেন মহাসচিব গুতেরেস।

তিনি বলেন, এই বিপুলসংখ্যক সভা ও প্রতিবেদন আমাদের সবাইকে প্রচণ্ড ক্লান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, এসবের অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়।

গুতেরেস আরও জানান, সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের মতো সংস্থাগুলো থেকে প্রতি বছর যে বিপুলসংখ্যক ‘ম্যান্ডেট’ (নির্দেশনা) আসে, তা পূরণ করতে গিয়েই এত সভা ও রিপোর্টের বোঝা তৈরি হয়।

অর্থনৈতিক সংকটও জাতিসংঘের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। গত সাত বছর ধরে চাঁদা দিতে সদস্য রাষ্ট্রদের অনাগ্রহের কারণে সংস্থাটি ধারাবাহিক অর্থসংকটে ভুগছে। বাজেট ঘাটতি দেখা দিচ্ছে নিয়মিত।

এ অবস্থায় গুতেরেস আহ্বান জানিয়েছেন—অপ্রয়োজনীয় সভা বাতিল করতে হবে, প্রতিবেদন তৈরির সংখ্যা কমাতে হবে এবং যেগুলো তৈরি হবে, সেগুলো যেন সব ম্যান্ডেট পূরণে কার্যকর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সংস্থাটির এই স্বীকারোক্তি জাতিসংঘের কাজের ধরন ও কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের সময় অপচয় বন্ধে এটি হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

‘জাতিসংঘের বেশিরভাগ রিপোর্ট কেউ পড়ে না’—স্বীকারোক্তি সংস্থাটিরই

আপডেট সময় : ১১:৪৬:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

জাতিসংঘ প্রতিবছর হাজারেরও বেশি প্রতিবেদন তৈরি করে। কিন্তু এর অধিকাংশই বাস্তবে পাঠকের চোখে পড়ে না। সম্প্রতি প্রকাশিত এক অভ্যন্তরীণ সংস্কারমূলক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির নিজস্ব এই পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় সভা ও অপ্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনের ভারে জাতিসংঘ কার্যত নতজানু হয়ে পড়েছে।

২০২৫ সালে জাতিসংঘের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংস্থার কাজের গতি ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে শুরু হয়েছে এক বিশেষ উদ্যোগ—‘UN80 Task Force’। গত মার্চে এটি চালু করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

৩১ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু গত বছরই জাতিসংঘে হয়েছে ২৭ হাজার সভা—যেখানে অংশ নেয় প্রায় ২৪০টি সংস্থা ও কমিটি। এ সময় তৈরি হয়েছে ১ হাজার ১০০টি প্রতিবেদন, যা ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, এই বিপুল পরিমাণ প্রতিবেদনের সিংহভাগই কোনো কাজে আসে না। মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিবেদন ৫ হাজার ৫০০ বারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। আবার প্রতি পাঁচটি প্রতিবেদনের একটি এক হাজারেরও কমবার ডাউনলোড হয়েছে। তাও ডাউনলোড মানেই যে পাঠক তা পড়েছেন, তা নয় বলেও মন্তব্য করেন মহাসচিব গুতেরেস।

তিনি বলেন, এই বিপুলসংখ্যক সভা ও প্রতিবেদন আমাদের সবাইকে প্রচণ্ড ক্লান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, এসবের অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়।

গুতেরেস আরও জানান, সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের মতো সংস্থাগুলো থেকে প্রতি বছর যে বিপুলসংখ্যক ‘ম্যান্ডেট’ (নির্দেশনা) আসে, তা পূরণ করতে গিয়েই এত সভা ও রিপোর্টের বোঝা তৈরি হয়।

অর্থনৈতিক সংকটও জাতিসংঘের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। গত সাত বছর ধরে চাঁদা দিতে সদস্য রাষ্ট্রদের অনাগ্রহের কারণে সংস্থাটি ধারাবাহিক অর্থসংকটে ভুগছে। বাজেট ঘাটতি দেখা দিচ্ছে নিয়মিত।

এ অবস্থায় গুতেরেস আহ্বান জানিয়েছেন—অপ্রয়োজনীয় সভা বাতিল করতে হবে, প্রতিবেদন তৈরির সংখ্যা কমাতে হবে এবং যেগুলো তৈরি হবে, সেগুলো যেন সব ম্যান্ডেট পূরণে কার্যকর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সংস্থাটির এই স্বীকারোক্তি জাতিসংঘের কাজের ধরন ও কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের সময় অপচয় বন্ধে এটি হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।