ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, জেলেরা পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত ইলিশ উপকূলজুড়ে জেলেদের দীর্ঘশ্বাস

: জুয়েল রানা ( পটুয়াখালী) জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১ মাস আগে

8

মা ইলিশ সংরক্ষণে আগামী ০৩ ই অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২ টা পর্যন্ত পদ্মা মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ সহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ খবরে উপকূলজুড়ে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশার ছায়া।

বড় মৌসুমেও দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আশানুরূপ ইলিশের দেখা মিলছে না। প্রতিবছর এ সময় নদী ও সাগর জুড়ে ইলিশের ছড়াছড়ি থাকলেও এ বছর জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্খিত মাছ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাজারো জেলে পরিবার। নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু জেলেরই নয়,ক্ষতির মুখে পড়বেন আড়তদার,ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় মাছ বিক্রেতারাও তাই অনেকেই পেশা পরিবর্তন করার কথা ভাবছেন।
স্থানীয় জেলেরা বলছেন, সাগরে কিংবা নদীতে ইলিশ থাকলেও আগের মতন ধরা পড়ছে না। এবং অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বৈরী আবহাওয়া থাকার কারণে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করতে যেতে পারছেন না জেলেরা, এবং বৈরী আবহাওয়া থাকার কারণে পর্যাপ্ত মাছ শিকার করতে না পারায় লাভের আশা দেখছে না অধিকাংশ জেলেরা, এবং তারা ক্রমাগতভাবে ঋণী হয় যাচ্ছেন। সম্প্রতি কিছু সময় মাছ পেলেও নিষেধাক্কার খবরে আবারও তারা হতাশ। গত বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ১২ ই অক্টোবর থেকে, কিন্তু এবছর তা এগিয়ে এনে তা
৩ অক্টোবর করা হয়েছে। ফলে জেলেরা সংশ্লিষ্টদের কাছে তারিখ পূর্ণ বিবেচনার দাবি তুলছেন। বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী মৎস অবতরণ কেন্দ্র মহিপুর থেকে প্রতিদিন হাজারো জেলে নদী ও সাগরে মাছ ধরতে গেলেও অনেক সময় খালি জাল টেনে ফেরতে হচ্ছে। যেসব নৌকায় অল্প ইলিশ ধরা পড়ছে,তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরি ও জ্বালানি খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে চরম অর্থকষ্টে পড়ছেন জেলেরা। বাজারেও ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে হু হু করে।

রাঙ্গাবালীর বনবিভাগ কর্মকর্তা সোহেব মাহমুদ বলেন,নিষিদ্ধ টোলিং বোর্ডগুলি উপকূলীয় অঞ্চলে অবৈধ জালের ফাঁদ ব্যবহার করে পর্যাপ্ত ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন তারা, যার কারণে পর্যাপ্ত ইলিশ পাচ্ছেন না অন্যান্য জেলেরা। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলে হাজারো জাল, বিশেষ করে নিষিদ্ধ কারেন্ট,মশারি এবং ফাঁদ জালের কারণে ইলিশ ঝাঁক বেঁধে উপরে উঠতে পারে না। ফলে আগের মত পর্যাপ্ত ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা।
মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ শাজাহান ভূঁইয়া বলেন, পরিবার চালানো এখন ভীষণ কষ্ট হয়ে পড়ছে, শুধু জেলেরাই নয় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরাও। ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, আড়তদার এবং স্থানীয় বাজারের বিক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।অনেক আরতদার ঋণ করে নৌকা এবং জাল কিনেছিলেন,এখন ঋণ শোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।

রাঙ্গাবালীর জাহাজ মারার ঘাটের জিদান ফিসের মৎস্য আরতের স্বত্বাধিকারী শাজাহান ভূঁইয়া বলেন, ভরা মৌসুমেও পর্যন্ত ইলিশ না পাওয়ায় জেলেদের জীবনে বড় কষ্ট ভয়ে এনেছে। জেলে, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও শ্রমিক সবাই ঋণের বোঝায় জর্জরিত। কেউ কেউ ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন,এবং অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। ইলিশ ধরা পড়া যখনই শুরু হয়, তখনই সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়। আমরা চাই তারিখ পূর্ণ নির্ধারণ করা হোক এবং ভারত ও বাংলাদেশ একই সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করুক। না হলে তাহারা আমাদের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই।
পটুয়াখালী সদর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃমাহফুজুর রহমান বলেন, ডুবোচর, প্রতিকুল আবহাওয়া, অতিরিক্ত মাছ শিকার এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে ইলিশের প্রজনন ও মজুতে প্রভাব পড়তে পারে। সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মা ইলিশ রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আশা করি এটি সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে নদী ও সাগরে বড় ইলিশের প্রাচুর্য বাড়বে। তখন জেলেরা আরো বেশি মাছ ধরতে পারবে,যা তাদের জীবনে স্বস্তি আনবে।