আনারকলি ফল চাষে সফল ঝিনাইদহের স্টালিন

: চলনবিলের সময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

8

বিদেশি ফল ‘প্যাশন ফ্রুট’। বাংলাদেশে পরিচিত ‘আনারকলি’ বা ‘ট্যাং ফল’ নামে। এ ফল চাষ করে দারুণ সফলতা পেয়েছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্টালিন। দেশের পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে কয়েক বছর আগেই ফলটির চাষ শুরু হয়। তবে এই প্রথম সমতলে আনারকলির বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন তিনি। তরুণ এ কৃষি উদোক্তা মহেশপুরের পান্তাপাড়া ইউনিয়নের ঘুঘরি গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, মৃদু টক-মিষ্টি স্বাদের আনারকলি ফলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন। প্রতি পিস আনারকলি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে আনারকলি ফল চাষ করা যায়। যে কারণে এর উৎপাদন খরচও কম। ফলে নেই কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি। স্বাদে-গন্ধে অনন্য এ ফলের আবাদে দেশের ফল উৎপাদনে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্টালিন জানান, ৬-৭ বছর আগে তিনি কৃষিকাজ শুরু করেন। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকাজে নতুনত্ব আনতে চেয়েছেন। প্রথমদিকে প্রায় ৬ বিঘা জমিতে ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারা ও আঙুর চাষ শুরু করেন। ২০২২ সালের মাঝামাঝি প্যাশন ফ্রুটের খবর দেখে আগ্রহী হন। ওই বছরই পরীক্ষামূলকভাবে ২ শতাংশ জমিতে চাষ করেন। গত বছর বাগান থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেন। চলতি বছর প্রায় ১ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। গড়ে মাত্র দুই শতক জমিতে এ ফল চাষ করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে আরও আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ শুরু করেছেন।

মাহমুদ হাসান স্টালিন চলনবিলের সময়কে বলেন, প্রথমে যখন আবাদ শুরু করি; তখন কেউ এ ফল চিনতো না। এখন ইউটিউব-ফেসবুক দেখে অনেকেই আনারকলি ফল চেনেন। যে কারণে স্থানীয় বাজারেও চাহিদা বাড়ছে। প্রতি পিস আনারকলি পাইকারি ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করা হয়।

তরুণ এ কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, দুই শতক জমিতে আনারকলি আবাদ করে ফলন ভালো হয়েছে। যে কারণে এখন আরও আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ বাড়িয়েছি। বছরে ১ বিঘা জমিতে গড়ে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা আনারকলি বিক্রি করা সম্ভব।

জানা যায়, আনারকলি মাচায় চাষ করতে হয়। প্রতিটি গাছের ডগায় প্রচুর ফল ধরে। এ ফল চাষ করতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। জৈব পদ্ধতিতে আবাদ করা যায়। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। ভিটামিন-সি, আয়রন, জিংক ও ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এ ফল।

মহেশপুরের ঘুঘরি গ্রামের মানিক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, স্টালিন ভাইয়ের আনারকলি ফলের বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। মাত্র দুই শতক জমির বাগানে হাজার হাজার ফল ধরে। এই ফলের উৎপাদন অনেক বেশি। আনারকলি ফল খেতেও মজাদার।

আনারকলি ফল চাষে সফল ঝিনাইদহের স্টালিন

স্থানীয় কৃষক টিপু সুলতান বলেন, আমরা আগে এই ফল চিনতাম না। স্টালিনের বাগান দেখে অনেকেই হাসাহাসি করতো। ফল ধরার পর সবাই অবাক। প্রতিটি গাছে হাজার হাজার ফল ধরে। এই ফল কিনতে চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসছে।

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্টালিন বলেন, ‘বিঘাপ্রতি আনারকলি চাষ করলে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি করা সম্ভব। এই ফল পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। উৎপাদন খরচ খুবই কম। বর্তমানে ফল উৎপাদনের পাশাপাশি চারা উৎপাদন শুরু করেছি। অনেকেই এসে চারা নিয়ে যাচ্ছেন।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ঝিনাইদহে নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে। মহেশপুরের মাহমুদ হাসান স্টালিন বিদেশি প্যাশন ফ্রুট চাষ করে দারুণ ফলন পেয়েছেন। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে স্টালিনসহ সব কৃষককে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।