বাগেরহাটে শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

: বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩ দিন আগে

46

বাগেরহাট জেলায় এবার শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনুকূল আবহাওয়া ও মাটির লবণাক্ততা কমে যাওয়ায় সবজি উৎপাদনে কৃষকেরা ভালো ফল পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন জেলায় সবজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৩ হাজার ২৭৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে চাষাবাদ কিছুটা বিলম্বে শুরু হলেও এখন মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।

ইতোমধ্যে চিতলমারীসহ কয়েকটি উপজেলার মাঠে টমেটোর ফলন শুরু হয়েছে। বাজারে কাঁচা টমেটো আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি যাত্রাপুর ও বারুইপাড়ার বিশাল ক্ষেতজুড়ে শিম, লালশাক, সবুজ শাক ও পালংশাকের প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কৃষকেরা জানাচ্ছেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে স্থানীয় বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করবে।

বাগেরহাটের নয়টি উপজেলায়—সদর, কচুয়া, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, মোরেলগঞ্জ, শরনখোলা, রামপাল, মোংলা ও চিতলমারীতে—বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে টমেটোর আবাদ সবচেয়ে বেশি।

উপজেলা ভিত্তিক সবজি আবাদ
বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৪৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে টমেটো, লাউ, বরবটি, বেগুন, শিম, লালশাক ও পালংশাক প্রধান। ফকিরহাটে ৫০০ হেক্টর জমিতে মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ ও ধনিয়াপাতা আবাদ হয়েছে।
মোল্লাহাটে ৫৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে টমেটোই সবচেয়ে বেশি—৫২৩ হেক্টর জমিতে।
রামপালে ৯৫ হেক্টর, কচুয়ায় ৪৭৭ হেক্টর, মোরেলগঞ্জে ১৩৫ হেক্টর, শরনখোলায় ৪০ হেক্টর, মোংলায় ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি আবাদ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে চিতলমারী উপজেলায়—৯৯১ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে ৮৫৪ হেক্টর জমিতেই টমেটো আবাদ করা হয়েছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, “চলতি বছরে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় ১,৬৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে আবাদ কিছুটা বিলম্বে শুরু হলেও এতে জমির লবণাক্ততা অনেকটা কমেছে। ফলে সবজি চাষে ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।”

অন্যদিকে অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলহাজ মো. মোতাহার হোসেন বলেন, “চলতি মৌসুমে সার ও বীজের কোনো সংকট নেই। ফলে কৃষকেরা আগের তুলনায় বেশি জমিতে সবজি আবাদ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনও বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, “সবজি চাষে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহারে সতর্কতা, পোকা দমন, উন্নত বীজ সরবরাহ ও কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। মাছের ঘেরের পাড়ে চাষ হওয়া অনেক সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার খুবই কম, ফলে ক্রেতারা পাচ্ছেন নিরাপদ সবজি।”

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর টমেটো, লাউ, শিম, চাল কুমড়া, ওলকপি, করলা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করে একেকজন কৃষক একরপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন।

তবে মৌসুমের শেষ দিকে টমেটোর অতিরিক্ত উৎপাদনে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সরকার চিতলমারী ও মোল্লাহাটে তিনটি কোল্ডস্টোরেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে কৃষকেরা তাদের ফসল সংরক্ষণ করে পরে ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন।

সার্বিকভাবে কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে বাগেরহাট জেলায় শীতকালীন সবজির উৎপাদন পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এতে একদিকে কৃষকের আয় বাড়বে, অন্যদিকে ক্রেতারাও সহনীয় দামে সবজি কিনতে পারবেন।