চলনবিলের শুটকি যাচ্ছে দেশ-বিদেশে, ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা

: চলনবিলের সময়
প্রকাশ: ২১ ঘন্টা আগে

34

বন্যার পানি নামতে শুরু করতেই মৎস্যভাণ্ডারখ্যাত চলনবিল এলাকায় জমে উঠেছে শুটকি তৈরির মৌসুম। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার শত শত চাতালে এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। দেশীয় প্রজাতির মাছ দিয়েই চলছে শুটকি তৈরির কাজ। সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ২৭৫.৮০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিমণ কাঁচা মাছ ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দরে কেনা হচ্ছে। প্রায় ৩ কেজি কাঁচা মাছ থেকে ১ কেজি শুটকি তৈরি হয়। উৎপাদিত শুটকির মান ও প্রজাতিভেদে পাইকারি দাম ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষাকালে চলনবিলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। সকাল-বিকেলে এসব মাছ স্থানীয় আড়ত থেকে কিনে এনে চাতালে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। এ বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়েছে উৎপাদন। প্রতিটি চাতালে ১০–১৫ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন, যার মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণই বেশি।

তবে চাতালের শ্রমিকরা জানান, তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার। একজন নারী শ্রমিক দিনে ২৫০ টাকা মজুরি পেলেও পুরুষ শ্রমিক পান ৫০০ টাকা এবং তিন বেলা খাবারসহ অন্যান্য সুবিধা। নারী শ্রমিকদের এসব সুবিধা দেওয়া হয় না।

তাড়াশের শুটকি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ বছর মাছের সরবরাহ কম থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। চলনবিলে যত্রতত্র পুকুর খনন এবং স্বল্প বন্যার কারণে মাছের পরিমাণ আগের তুলনায় কমে গেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর যেখানে ৩০–৩২ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদিত হয়েছিল, এবার তা ১০–১২ মেট্রিক টনে নেমে আসতে পারে।

উল্লাপাড়ার বড়পাঙ্গাসী এলাকার শুটকি ব্যবসায়ী হাছেন আলী জানান, বর্ষার সময় মাছের আমদানি বাড়ে। তখন এলাকার হাট থেকে মাছ কিনে এনে শুটকি তৈরি করা হয়। এখানকার শুটকি দেশের বিভিন্ন মোকাম বাজারে—বিশেষ করে সৈয়দপুর, জয়পুরহাট, রংপুর অঞ্চলে—বেশ জনপ্রিয়।

চাতালের নারী শ্রমিক হাফিজা ও শাহিনুর জানান, সংসারের অতিরিক্ত আয়ের জন্য তারা মাছ বাছাইয়ের কাজ করেন। দিনে ছয়–সাত ঘণ্টা কাজ করে তারা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি পান।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোকারম হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে মাছের সরবরাহ কিছুটা কম থাকলেও প্রায় ৭০–৮০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান, বর্তমানে প্রায় ৩০–৩৫টি চাতালে শুটকি উৎপাদন চলছে। প্রতিবছর এখান থেকে ৮০–১০০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদিত হয়, যা দেশের বিভিন্ন মোকাম ছাড়াও ঢাকা ও নীলফামারীতে পাঠানো হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে শুটকি উৎপাদনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে চাতালগুলো।
তিনি আরও জানান,সিরাজগঞ্জের শুটকি এখন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এখানকার পণ্য নীলফামারী আড়ত হয়ে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।