ঢাকা ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

নওগাঁর সাপাহারে জবই বিলে পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলীতে মুখর

অনলাইন নিউজ ডেস্ক,পরিবর্তন টিভি
  • আপডেট সময় : ০৬:২৬:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫ ৭০ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শীতের তীব্রতা একটু বাড়তেই জেলার সাপাহারে ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে পরিযায়ী পাখিদের আগমন শুরু হয়েছে। পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে বিল এলাকা এখন মুখরিত।

 

প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও একটু আগেভাগেই এই বিলে অতিথি পাখিদের পদচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন, জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান।

ইতোমধ্যেই সুদুর সাইবেরিয়া, ইউরোপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পরিযায়ী পাখির মধ্যে বড় খোপা, ডুবুরী, লেজ্ঞাহাস, পিয়াং হাস, চখাচখি, পাতিসরালী, তিলি হাস, ভুতি হাঁস সহ প্রায় ৪০ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এই বিলে। বিগত কয়েক বছর যাবত দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পাখি প্রেমিক, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর জাহাঙ্গীর কবির পরিদর্শক, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র সংরক্ষক ফেডারেশনের বন সংরক্ষক ও প্রধান উপদেষ্টা মোল্ল্যা রেজাউল করিম, বগুড়া শাহ সুলতান কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান মোখলেছুর রহমান, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ঢাকা বন ভবনের সানাউল্ল্যাহ পাটোয়ারি এই জবই বিল সফর ও ভ্রমণ করেছেন।

 

সেই সাথে তারা জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে প্রতিবছর বিলে একটি করে পাখি জরিপ কার্য্য সমাধান করেছেন। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত ২০২৩ সালে এই বিলে অতিথি পাখি সহ সর্বমোট পাখির সংখ্যা ছিল আবাসিক পরিযায়ী পাতি সরালি প্রায় ২ হাজার ২৩টি, পরিযায়ী লাল ঝুটি ভূতিহাঁস প্রায় ৩ হাজার, পরিযায়ী গিরিয়া হাঁস প্রায় ৬শ, পরিযায়ী পাতি তিলি হাঁস,৫শ, পরিযায়ী টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস প্রায় ১২টি, পরিযায়ী কলাপাখি ঠেঙ্গি ৬০টি, গেওলা বাটান ২শটি, চা পাখি ৪শ’টি, প্রশান্ত সোন জিরিয়া ২শটি, পাতি ভূতি হাঁস১৫০টি সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১১ হাজার ২৩০টি।

 

 

অতীতে এই বিলে সুদুর সাইবেরিয়া হতে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে পুরো বিলে পর্যাপ্ত কচুরীপানা ও পাখিদের আড্ডায় সারাক্ষণ কিচির মিচির শব্দে এলাকা মুখরিত হয়ে থাকত। সে সময় রাজধানী ঢাকা শহর সহ দেশের বিভিন্নস্থান হতে পাখি শিকারিরা এই বিলে পাখি শিকার করতে আসত। মাঝ খানে এলাকার লোকজন পুরো বিলটি কচুরিপানা মুক্ত করে সেখানে ধান চাষাবাদ শুরু ও অধিক হারে পাখি শিকার করায় পাখির আগমন কমতে শুরু করে এবং এক সময় জাল যার জলা তার নীতি অবলম্বন করায় বিল হতে অতিথি পরিযায়ী পাখি আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

 

 

পরবর্তী সময়ে বিলটি মৎস্য চাষের আওতায় এনে মৎস্য প্রকল্পের মাধ্যমে বিলে মাছ চাষ শুরু হলে আবারো বিলে অতিথি পাখিদের দেখা মিলতে শুরু করে। এমন সময় বিলে পাখি শিকার বন্ধ করতে স্থানীয় কতিপয় যুবক জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ নামে একটি সংগঠন তৈরী করে পাখিদের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের সহযোগী হিসেবে ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করেন।  তাঁরা পাখি শিকার বন্ধে ঝটিকা অভিযান শুরু করে যার ফলে একসময় জবই বিল হতে যে কোন ধরণের পাখি শিকার চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা সারা বছর বিলটিতে পাখিদের বসবাসের জন্য বিলটির যে কোন অংশে একটি পাখির অভয়াশ্রম তৈরীর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর আবেদন করেছেন।  আর দু’চার দিনের মধ্যেই আবারো জবই বিলে মাছ ধরার মহোৎসব শুরু হলে পাখিরা অনিরাপদ হয়ে পড়বে। তার আগেই জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ হতে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পাখির অভয়াশ্রম তৈরীর জন্য আবার আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি বিলের কোন এক অংশে পাখির অভয়াশ্রম তৈরীর জন্য লাল পতাকা দ্বারা চিহ্নিত করতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ পাখিদের জন্য নিরাপদ অভয়াশ্রম নির্মাণের জন্য বিলের কোন এক অংশে লাল পতাকা দ্বারা চিহ্নিতকরণ করার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে বিষয়টি তিনি দেখবেন।

এরপর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসা. রোজিনা খাতুন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন যে, নি:সন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ নির্বাহী অফিসার স্যার আমাকে মৌখিকভাবে লাল পতাকা দিয়ে পাখিদের অভয়াশ্রমের এলাকা চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি আমি গুরুত্বের সাথে দেখছি।

এলাকার পাখি প্রেমিক ও জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্য সহ পুরো এলাকাবাসী অচিরেই সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই জবই বিলের কোন এক অংশে পাখির অভয়াশ্রম তৈরী করে পাখিদের নিরাপদ বসবাসের ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

নওগাঁর সাপাহারে জবই বিলে পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলীতে মুখর

আপডেট সময় : ০৬:২৬:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

শীতের তীব্রতা একটু বাড়তেই জেলার সাপাহারে ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে পরিযায়ী পাখিদের আগমন শুরু হয়েছে। পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে বিল এলাকা এখন মুখরিত।

 

প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও একটু আগেভাগেই এই বিলে অতিথি পাখিদের পদচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন, জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান।

ইতোমধ্যেই সুদুর সাইবেরিয়া, ইউরোপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পরিযায়ী পাখির মধ্যে বড় খোপা, ডুবুরী, লেজ্ঞাহাস, পিয়াং হাস, চখাচখি, পাতিসরালী, তিলি হাস, ভুতি হাঁস সহ প্রায় ৪০ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এই বিলে। বিগত কয়েক বছর যাবত দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পাখি প্রেমিক, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর জাহাঙ্গীর কবির পরিদর্শক, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র সংরক্ষক ফেডারেশনের বন সংরক্ষক ও প্রধান উপদেষ্টা মোল্ল্যা রেজাউল করিম, বগুড়া শাহ সুলতান কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান মোখলেছুর রহমান, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ঢাকা বন ভবনের সানাউল্ল্যাহ পাটোয়ারি এই জবই বিল সফর ও ভ্রমণ করেছেন।

 

সেই সাথে তারা জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে প্রতিবছর বিলে একটি করে পাখি জরিপ কার্য্য সমাধান করেছেন। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত ২০২৩ সালে এই বিলে অতিথি পাখি সহ সর্বমোট পাখির সংখ্যা ছিল আবাসিক পরিযায়ী পাতি সরালি প্রায় ২ হাজার ২৩টি, পরিযায়ী লাল ঝুটি ভূতিহাঁস প্রায় ৩ হাজার, পরিযায়ী গিরিয়া হাঁস প্রায় ৬শ, পরিযায়ী পাতি তিলি হাঁস,৫শ, পরিযায়ী টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস প্রায় ১২টি, পরিযায়ী কলাপাখি ঠেঙ্গি ৬০টি, গেওলা বাটান ২শটি, চা পাখি ৪শ’টি, প্রশান্ত সোন জিরিয়া ২শটি, পাতি ভূতি হাঁস১৫০টি সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১১ হাজার ২৩০টি।

 

 

অতীতে এই বিলে সুদুর সাইবেরিয়া হতে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে পুরো বিলে পর্যাপ্ত কচুরীপানা ও পাখিদের আড্ডায় সারাক্ষণ কিচির মিচির শব্দে এলাকা মুখরিত হয়ে থাকত। সে সময় রাজধানী ঢাকা শহর সহ দেশের বিভিন্নস্থান হতে পাখি শিকারিরা এই বিলে পাখি শিকার করতে আসত। মাঝ খানে এলাকার লোকজন পুরো বিলটি কচুরিপানা মুক্ত করে সেখানে ধান চাষাবাদ শুরু ও অধিক হারে পাখি শিকার করায় পাখির আগমন কমতে শুরু করে এবং এক সময় জাল যার জলা তার নীতি অবলম্বন করায় বিল হতে অতিথি পরিযায়ী পাখি আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

 

 

পরবর্তী সময়ে বিলটি মৎস্য চাষের আওতায় এনে মৎস্য প্রকল্পের মাধ্যমে বিলে মাছ চাষ শুরু হলে আবারো বিলে অতিথি পাখিদের দেখা মিলতে শুরু করে। এমন সময় বিলে পাখি শিকার বন্ধ করতে স্থানীয় কতিপয় যুবক জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ নামে একটি সংগঠন তৈরী করে পাখিদের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের সহযোগী হিসেবে ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করেন।  তাঁরা পাখি শিকার বন্ধে ঝটিকা অভিযান শুরু করে যার ফলে একসময় জবই বিল হতে যে কোন ধরণের পাখি শিকার চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা সারা বছর বিলটিতে পাখিদের বসবাসের জন্য বিলটির যে কোন অংশে একটি পাখির অভয়াশ্রম তৈরীর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর আবেদন করেছেন।  আর দু’চার দিনের মধ্যেই আবারো জবই বিলে মাছ ধরার মহোৎসব শুরু হলে পাখিরা অনিরাপদ হয়ে পড়বে। তার আগেই জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ হতে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পাখির অভয়াশ্রম তৈরীর জন্য আবার আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি বিলের কোন এক অংশে পাখির অভয়াশ্রম তৈরীর জন্য লাল পতাকা দ্বারা চিহ্নিত করতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ পাখিদের জন্য নিরাপদ অভয়াশ্রম নির্মাণের জন্য বিলের কোন এক অংশে লাল পতাকা দ্বারা চিহ্নিতকরণ করার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে বিষয়টি তিনি দেখবেন।

এরপর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসা. রোজিনা খাতুন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন যে, নি:সন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ নির্বাহী অফিসার স্যার আমাকে মৌখিকভাবে লাল পতাকা দিয়ে পাখিদের অভয়াশ্রমের এলাকা চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি আমি গুরুত্বের সাথে দেখছি।

এলাকার পাখি প্রেমিক ও জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্য সহ পুরো এলাকাবাসী অচিরেই সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই জবই বিলের কোন এক অংশে পাখির অভয়াশ্রম তৈরী করে পাখিদের নিরাপদ বসবাসের ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।