হাওরে ভাসমান বাজারের উদ্বোধন, সমালোচনার ঝড়

- আপডেট সময় : ০৩:০৯:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫ ৮ বার পড়া হয়েছে

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসমান বাজার উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে হাওরে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর আরও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও নেটিজেনদের ধারণা। আবার কেউ কেউ বলছেন, পরিবেশবান্ধব ভাসমান বাজার পর্যটকদের আকর্ষিত করবে। তবে সদ্য উদ্বোধন হওয়া ভাসমান বাজার নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসমান বাজার উদ্বোধন করেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হাসেম প্রমুখ। এরপর থেকেই শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে জনপ্রিয় পর্যটনস্পট টাঙ্গুয়ার হাওরকে আরও বিকশিত করতে এবং হাওর পাড়ের সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে হাওরে ভাসমান বাজার উদ্বোধন করেন। তবে ভাসমান বাজার উদ্বোধনের পর থেকে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। যাদেরকে ব্যবসায়ী করে ভাসমান বাজার উদ্বোধন করা হয়েছে তারা মূলত হাওরে পর্যটকদের নিয়ে ছোট নৌকায় ঘুরে কিছু টাকা আয় করেন।

অভিযোগ উঠছে, একদিনের জন্য ভাসমান বাজার উদ্বোধনের জন্য স্থানীয় বাদাঘাট বাজার থেকে ১০ হাজার টাকার পণ্য কিনে ৮টি ছোট নৌকায় সাজিয়ে রেখে ফটোসেশন করা হয়। উদ্বোধন শেষে আবার তাদের থেকে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন পণ্য নিয়ে নেন। এ ছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসমান বাজারে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য আরও ক্ষতি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
জয়পুর গ্রামের নৌকা চালক মহসিন মিয়া, রহিম মিয়া ও আলমগীর বলেন, আমরা ছোট নৌকায় হাওরের ভেতর পর্যটকদের ঘুরিয়ে ৫০০ এক হাজার টাকা রুজি করি। ভাসমান বাজার উদ্বোধন করার কথা বলে ইউএনওর লোকজন আমাদের নৌকা বৃহস্পতিবার রং করেন এবং আজকে আমাদের ৮টি নৌকায় ১০ হাজার টাকার পণ্য দিয়ে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ভাসমান বাজার উদ্বোধন করেন। পরে উদ্বোধন শেষে পণ্যগুলো তারা নিয়ে নেন। এতে দুদিন ধরে আমাদের কোনো রুজি নেই।
ভাসমান বাজারের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে হাওর পাড়ের পরিবেশকর্মী আহমদ কবির বলেন, হাওরে লোক দেখানো ভাসমান বাজার উদ্বোধন করা হয়েছে। একটি ব্যানার ও ৮টি নৌকায় মালামাল দিয়ে বাজার হয় না। একটি বাজার করতে হলে নির্ধারিত স্থানে বাসের চাটাই বা অবকাঠামো করার প্রয়োজন ছিল। এখানে আজকের পরে বাজারের কোনো অস্তিত্ব থাকবে বলে মনে হয় না।
সুনামগঞ্জ জেলা হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতা ওবায়দুল হক মিলন বলেন, প্লাস্টিক ও চিপসের প্যাকেট আরও বেশি পড়বে পানিতে। এতে পরিবেশের আরও ক্ষতি হবে। উজ্জল বলেন, পর্যটকরা পণ্য কিনেই নৌকায় উঠেন সেখান থেকে কেউ কিনবে না।
এ ছাড়াও অনেক নেটিজেন ফেসবুকে ভাসমান বাজারের কারণে হাওরের ক্ষতি হতে পারে বলে বিভিন্ন পোস্ট করেন।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসমান বাজার। দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন পর্যটনস্পটে ভাসমান বাজার রয়েছে। এতে পর্যটকদের আকর্ষিত করে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল, হাতে তৈরি পণ্য ইত্যাদি স্থানীয়রা বিক্রি করবে। এতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এ জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ দেই। তবে হাওরে ভাসমান বাজারের উদ্বোধন এত ছোট পরিসরে করা ঠিক হয়নি।
এসব প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসেম তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। নিজের ফেসবুকে এক ট্যাটাসে তিনি জানান, ভাসমান বাজার নিয়ে অনেকেই ভুল ধারণা করছেন। এটি মূলত স্থানীয় জনগণের বিকল্প আয়ের উৎস তৈরির একটি ‘নিউ কনসেপ্টথ’। এখানে চিপস বা প্লাস্টিক মোড়কে খাবার বিক্রির সুযোগ নেই। বিক্রি হবে ফলমূল, সবজি, পিঠার মতো পরিবেশবান্ধব পণ্য।
তিনি আরও জানান, গোলাবাড়ি ও জয়পুর এলাকার বাসিন্দারা আগে প্লাস্টিক মোড়কে পণ্য বিক্রি করতেন। এখন তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে প্লাস্টিকবিহীন খাবার বিক্রির দিকে। এ উদ্যোগে প্রশাসন কেবল দিকনির্দেশনা দিচ্ছে, পণ্য সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ করবেন স্থানীয়রাই।
নৌকা চালকদের ব্যবসায়ী সাজিয়ে ভাসমান বাজার উদ্বোধনের বিষয়ে ইউএনও বলেন, এটি মূলত হাওর পাড়ের মানুষের মনে আগ্রহ তৈরির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। পণ্যগুলো প্রশাসনের ফান্ড থেকে খরচ করে করা হয়েছে।