
চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন সড়কে কিশোরদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে দল বেঁধে চলাফেরা করা এসব বখাটে কিশোরদের কারণে সড়কগুলো এখন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। শুধু অতিরিক্ত গতিই নয়, তাদের অনেকেই মোটরসাইকেলে বাড়তি একজস্ট লাগিয়ে বিকট শব্দ তৈরি করে পথচারীদের অতিষ্ঠ করে তুলছে।
বিশেষ করে শাহী মসজিদ থেকে মহিলা কলেজ হয়ে ভাদুনগর পর্যন্ত এবং নতুন বাজার থেকে রেলবাজার পর্যন্ত সড়কগুলোতে নিয়মিতই এমন দৃশ্য দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে এসব ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অনুসন্ধানে যা জানা গেল
পৌর শহরসহ আশেপাশের বাজার এলাকায় কিছু কিশোর-যুবক নিয়মিত মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে দলবদ্ধভাবে মোটরসাইকেল চালায়। অনেক সময় একসঙ্গে ২/৩ জন চড়ে বসে। তাদের কারও নেই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স, মাথায় নেই হেলমেট, এমনকি ব্যবহৃত মোটরসাইকেলেরও নেই ফিটনেস। অনেক ক্ষেত্রে তারা চোরাই কিংবা বর্ডার ক্রস বাইক ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তাদের বিকট হর্ন, উচ্চগতি এবং একজস্টের তীব্র শব্দে পথচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শিশু ও বৃদ্ধরা শব্দ দূষণে মানসিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাঝেমধ্যেই এদের বেপরোয়া আচরণের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে—কারও অকালে মৃত্যু হচ্ছে, কেউ আবার সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। বিশেষ করে মহিলা কলেজ ও বালিকা বিদ্যালয়ের ছুটির সময়ে শহরের ভেতরে এদের আধিপত্য স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। আবার ছুটির দিনে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের আশপাশেও এদের আনাগোনা থাকে নিয়মিত।
শুধু নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরা নয়, সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও এ কাজে সমানভাবে যুক্ত। অনেক ধনী অভিভাবক সন্তানদের শখ পূরণের জন্য দামি মোটরসাইকেল কিনে দিচ্ছেন, যা শেষ পর্যন্ত তাদের সমাজে বখাটে হিসেবে পরিচিত করছে।
স্থানীয়দের মতামত
চাটমোহরের সংগীত ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক দেওয়ান জামিউল ইসলাম কাবলী বলেন,
“এখন শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও উঠতি বয়সী ছেলেরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই এদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। তবে সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে অভিভাবকদের। সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ না করলে একদিন তাদেরই চোখের জল ফেলতে হবে।”
পুলিশের বক্তব্য
চাটমোহর থানার ওসি মনজুরুল আলম জানান,
“অনেকেই মৌখিকভাবে আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। খুব শীঘ্রই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সচেতন মহলের দাবি
সাধারণ মানুষ বলছেন, এসব কিশোর যদি বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারে তবে তাদের মোটরসাইকেল জব্দ করা এবং মোটরযান আইনে মামলা দায়ের করা জরুরি। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেছেন অনেকে।