ঢাকা ০১:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
 জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। আগ্রহীরা ইমেইল আবেদন করুনঃ chalonbilersomoy@gmail.com। চলনবিলের সময় এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

বাছুর দেওয়ার কথা বলে ফটোসেশন, খিচুড়ি খাইয়ে বিদায়!

পরিবর্তন টিভি নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ ৭০ বার পড়া হয়েছে
চলনবিলের সময় অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রকল্পের নাম হতদরিদ্রদের মাঝে উন্নত জাতের গাভির বাছুর বিতরণ। বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা। সুফলভোগী ১০ জন নারী। কিন্তু তাদের বাছুর দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে প্রশিক্ষণের নামে বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তুলে বিদায় করা হয়েছে। কাউকে গরুর বাছুর দেওয়া হয়নি। খামার থেকে দশটি বাছুর এনে ছবি তোলা শেষে আবার খামারেই ফেরত পাঠানো হয় সেই বাছুরগুলো।

 

গরু না পাওয়ায় হতাশ ওইসব গরিব দুঃস্থ নারীরা। ফটোসেশনের দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনও তাদের গাভির বাছুর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ প্রকল্পের টাকা পুরোটাই আত্মসাতের অপচেষ্টা করা হয়েছে। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকার মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলুর বিরুদ্ধে।

 

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) আর্থিক সহায়তায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা এনজিওর উদ্যোগে দশজন দুস্থ নারীকে গাভির বাছুর দেওয়ার কথা বলে রেলবাজারে নিয়ে আসা হয়। নিজের পরিচিত একটি খামার থেকে দশটি গাভীর বাছুর গাড়িতে করে নিয়ে আসেন এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু। এরপর এলাকার কিছু ব্যক্তিকে তার বাসভবন-সংলগ্ন এনজিওর সামনে ডেকে এনে দশজন নারীকে দাঁড় করিয়ে গরু দেওয়ার ফটোসেশন করেন।

 

পরে ওইসব দুস্থ নারীদের গাভির বাছুর না দিয়ে খিচুড়ি ডিম খাইয়ে বিদায় করা হয়। এরপর বাছুরগুলো আবার একই গাড়িতে করে একই খামারে ফেরত দিয়ে আসা হয়। সেখানে উপস্থিত অনেকেই গরু প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক বাবলু জানান পরে দেওয়া হবে।

 

কুবিরদিয়ার মাঠপাড়া গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে খুশি খাতুন বাবার বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের বাড়িতে ও মাঠে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান।

 

তিনি বলেন, ট্রেনিংয়ের কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়ে হয়। গাভির বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তোলে। কিন্তু আমাকে গাভির দেয়নি। বলছে, এবার অন্য এলাকার লোকদের দেবো, পরেরবার তোমাকে দেবো। পরে খিচুড়ি ডিম খাইয়ে বিদায় করেছে। বাবলু কাকা ত্যাড়া মানুষ। বেশি কথা বললে আবার ধমক দেয়। তাই আর কিছু বলার সাহস পাইনি।

 

খুশি আরও বলেন, এর আগে একবার আমাকে একটা ছাগল দিয়েছিল বাবলু কাকা। তবে সেজন্য আমার কাছ থেকে নগদ ১৩০০ টাকা নিয়েছিল।

 

অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার চালানো এক গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের গাভি দেওয়ার কথা বলে ট্রেনিংয়ে ডেকে নেয়। ট্রেনিং শেষে আমাদের বাছুর হাতে দিয়ে ছবি তুলে বিদায় করেছে। বলছে, এখন না, পরে দেবো। এখন পর্যন্ত পাইনি। ট্রেনিংয়ে আমরা বিভিন্ন গ্রামের ১০ জন নারী ছিলাম।

 

যে গাড়িতে গরুর বাছুরগুলো আনা নেওয়া করা হয়েছে সেই গাড়ির চালক শুভ দাস বলেন, ওইদিন আমার গাড়ি নিয়ে মথুরাপুর এলাকার একটি গরুর খামার থেকে দশটা বাছুর নিয়ে রেলবাজার বাবলু সাহেবের বাসার সামনে নেওয়া হয়। পরে অনুষ্ঠান শেষে ওখান থেকে ওই বাছুরগুলো আবার মথুরাপুরের একই খামারে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু জানা নেই।

 

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, আমাকে অতিথি করে দাওয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। তবে আমার অফিসের প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি প্রত্যয়ন নেওয়ার জন্য রিপোর্ট অফিসে জমা দিয়েছেন কি না দেখে বলতে পারবো। তবে এরকম অভিযোগ থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে মোতাবেক প্রত্যয়ন দেওয়া হবে।

 

বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) উপমহাব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) মোস্তফা কামাল ভূঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষ প্রকল্পের আওতায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওকে আমরা ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তার মধ্যে প্রথম অবস্থায় ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। কার্যক্রম সন্তোষজনক রিপোর্ট পেলে তাকে বাকি ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে।

 

তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট ইউএনও বা তার প্রতিনিধিকে একীভূত করে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্টে ইউএনওর প্রত্যয়ন লাগবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এখনও তার রিপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। রিপোর্ট আসার পর যাচাইবাছাই করে দেখবো, ঘাপলা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এনজিও মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু বলেন, আমরা দশজন ছাড়াও আরও কয়েকজনকে ডেকেছিলাম। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দশজনকে গাভির বাছুর দেওয়া হয়েছে। বাকিদের পরের প্রকল্পে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বাছুর দেওয়ার কথা বলে ফটোসেশন, খিচুড়ি খাইয়ে বিদায়!

আপডেট সময় : ০৫:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

প্রকল্পের নাম হতদরিদ্রদের মাঝে উন্নত জাতের গাভির বাছুর বিতরণ। বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা। সুফলভোগী ১০ জন নারী। কিন্তু তাদের বাছুর দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে প্রশিক্ষণের নামে বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তুলে বিদায় করা হয়েছে। কাউকে গরুর বাছুর দেওয়া হয়নি। খামার থেকে দশটি বাছুর এনে ছবি তোলা শেষে আবার খামারেই ফেরত পাঠানো হয় সেই বাছুরগুলো।

 

গরু না পাওয়ায় হতাশ ওইসব গরিব দুঃস্থ নারীরা। ফটোসেশনের দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনও তাদের গাভির বাছুর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ প্রকল্পের টাকা পুরোটাই আত্মসাতের অপচেষ্টা করা হয়েছে। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকার মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলুর বিরুদ্ধে।

 

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) আর্থিক সহায়তায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা এনজিওর উদ্যোগে দশজন দুস্থ নারীকে গাভির বাছুর দেওয়ার কথা বলে রেলবাজারে নিয়ে আসা হয়। নিজের পরিচিত একটি খামার থেকে দশটি গাভীর বাছুর গাড়িতে করে নিয়ে আসেন এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু। এরপর এলাকার কিছু ব্যক্তিকে তার বাসভবন-সংলগ্ন এনজিওর সামনে ডেকে এনে দশজন নারীকে দাঁড় করিয়ে গরু দেওয়ার ফটোসেশন করেন।

 

পরে ওইসব দুস্থ নারীদের গাভির বাছুর না দিয়ে খিচুড়ি ডিম খাইয়ে বিদায় করা হয়। এরপর বাছুরগুলো আবার একই গাড়িতে করে একই খামারে ফেরত দিয়ে আসা হয়। সেখানে উপস্থিত অনেকেই গরু প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক বাবলু জানান পরে দেওয়া হবে।

 

কুবিরদিয়ার মাঠপাড়া গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে খুশি খাতুন বাবার বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের বাড়িতে ও মাঠে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান।

 

তিনি বলেন, ট্রেনিংয়ের কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়ে হয়। গাভির বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তোলে। কিন্তু আমাকে গাভির দেয়নি। বলছে, এবার অন্য এলাকার লোকদের দেবো, পরেরবার তোমাকে দেবো। পরে খিচুড়ি ডিম খাইয়ে বিদায় করেছে। বাবলু কাকা ত্যাড়া মানুষ। বেশি কথা বললে আবার ধমক দেয়। তাই আর কিছু বলার সাহস পাইনি।

 

খুশি আরও বলেন, এর আগে একবার আমাকে একটা ছাগল দিয়েছিল বাবলু কাকা। তবে সেজন্য আমার কাছ থেকে নগদ ১৩০০ টাকা নিয়েছিল।

 

অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার চালানো এক গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের গাভি দেওয়ার কথা বলে ট্রেনিংয়ে ডেকে নেয়। ট্রেনিং শেষে আমাদের বাছুর হাতে দিয়ে ছবি তুলে বিদায় করেছে। বলছে, এখন না, পরে দেবো। এখন পর্যন্ত পাইনি। ট্রেনিংয়ে আমরা বিভিন্ন গ্রামের ১০ জন নারী ছিলাম।

 

যে গাড়িতে গরুর বাছুরগুলো আনা নেওয়া করা হয়েছে সেই গাড়ির চালক শুভ দাস বলেন, ওইদিন আমার গাড়ি নিয়ে মথুরাপুর এলাকার একটি গরুর খামার থেকে দশটা বাছুর নিয়ে রেলবাজার বাবলু সাহেবের বাসার সামনে নেওয়া হয়। পরে অনুষ্ঠান শেষে ওখান থেকে ওই বাছুরগুলো আবার মথুরাপুরের একই খামারে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু জানা নেই।

 

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, আমাকে অতিথি করে দাওয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। তবে আমার অফিসের প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি প্রত্যয়ন নেওয়ার জন্য রিপোর্ট অফিসে জমা দিয়েছেন কি না দেখে বলতে পারবো। তবে এরকম অভিযোগ থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে মোতাবেক প্রত্যয়ন দেওয়া হবে।

 

বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) উপমহাব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) মোস্তফা কামাল ভূঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষ প্রকল্পের আওতায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওকে আমরা ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তার মধ্যে প্রথম অবস্থায় ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। কার্যক্রম সন্তোষজনক রিপোর্ট পেলে তাকে বাকি ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে।

 

তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট ইউএনও বা তার প্রতিনিধিকে একীভূত করে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্টে ইউএনওর প্রত্যয়ন লাগবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এখনও তার রিপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। রিপোর্ট আসার পর যাচাইবাছাই করে দেখবো, ঘাপলা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এনজিও মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু বলেন, আমরা দশজন ছাড়াও আরও কয়েকজনকে ডেকেছিলাম। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দশজনকে গাভির বাছুর দেওয়া হয়েছে। বাকিদের পরের প্রকল্পে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।