বেকারত্বের দুষ্টচক্র: অভিজ্ঞতা চাই, চাকরি নাই

: চলনবিলের সময়
প্রকাশ: ১ মাস আগে

9

চাকরির বাজারে আজকের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হলো“অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি নেই, আর চাকরি ছাড়া অভিজ্ঞতা নেই।” এ এক দুষ্টচক্র, যেখানে আটকে যাচ্ছে হাজারো তরুণ। একজন শিক্ষিত তরুণ যখন বেকার, তখন সমাজ তাকে দেখে বোঝা হিসেবে। অথচ তার বেকার হওয়ার পেছনে ব্যক্তিগত ব্যর্থতার চেয়ে বেশি দায়ী চাকরির অযৌক্তিক শর্ত আর বাস্তবতার কঠিন নিয়ম।

একজন বেকার যুবক চাকরির ইন্টারভিউতে গেলে তার প্রথম সংকট হয় পোশাক নিয়ে। বেকার মানে তার আয় নেই, তাই শালীন বা মানসম্মত পোশাক কেনার সামর্থ্যও সীমিত। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রার্থীর যোগ্যতার পাশাপাশি পোশাক-পরিচ্ছদকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে শুরুতেই তৈরি হয় বৈষম্য।

সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব তৈরি হয় অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে। চাকরির বিজ্ঞপ্তি ঘেঁটে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ প্রার্থী চাওয়া হয়। প্রশ্ন হলো—নতুন যারা শিক্ষাজীবন শেষ করেছে তারা কোথায় অভিজ্ঞতা অর্জন করবে? কেউ তো অভিজ্ঞতা নিয়ে জন্মায় না, আবার অভিজ্ঞতা বাজারে কিনেও পাওয়া যায় না। বাস্তবে চাকরির সুযোগ না পেলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লাখো শিক্ষিত তরুণ ডিগ্রি নিয়েও বেকার জীবন যাপন করছে। তারা অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে চাকরির সুযোগ পাচ্ছে না, আর চাকরি না পেয়ে অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারছে না। এ যেন সোনার হরিণ ধরা—যা হাত বাড়ালেই ধরা যায় না।

অন্যদিকে, সমাজ বেকার মানুষকে সম্মানের চোখে দেখে না। বেকার মানেই পরিবার ও সমাজের কাছে “বোঝা”। অথচ বেকাররা কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতকে যৌথ উদ্যোগে ইন্টার্নশিপ ও প্রশিক্ষণভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন প্রার্থীদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ তৈরি না হলে শিক্ষিত বেকারত্ব আরও বাড়বে।

একজন বেকার তরুণের অসহায় অভিব্যক্তি ছিলো—
“আমরা চাকরি খুঁজতে খুঁজতে অভিজ্ঞতা চাই, কিন্তু চাকরি না থাকায় অভিজ্ঞতা পাই না। সমাজ শুধু আমাদের বেকার বলে দোষ দেয়, কিন্তু কেউ আমাদের অবস্থাটা বোঝে না।”

একজন বেকার যুবকের ভাষায়—“আমরা চাকরি চাই বলে অভিজ্ঞতা চাই। কিন্তু অভিজ্ঞতা অর্জনের পথটাই বন্ধ। এই কষ্ট কেউ বোঝে না।”